শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের ডাক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ১৮সেপ্টেম্বর
গত১৭সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টায় চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি মোড়ে মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে “শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হোন” এই ডাকে ৮ দফা দাবিতে ছাত্র গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এ্যানি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক শাহ মোহাম্মদ শিহাবের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেনবিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন চট্টগ্রামের সংগঠক তিতাস চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের যুগ্ম আহবায়ক শাহরিয়ার রাফি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন চট্টগ্রাম এর যুগ্ম আহবায়ক সাইফুর রূদ্র, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সংগঠক আবিদ ইসলাম।
সমাবেশে সংহতি জানান, পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য’র সদস্য সচিব শ্রমিকনেতা কামাল উদ্দিন, সাবেক ছাত্র নেতা সামিউল আলম রিচি, সত্যজিৎ বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন বাপ্পি, নাহিদ মুস্তফা প্রমুখ।
সমাবেশে ছাত্রনেতারা বলেন, ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আইয়ুব খানের শাসনামলে চাপিয়ে দেয়া “টাকা যার শিক্ষা তার” এই নীতির বিরুদ্ধে ছাত্ররা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং সফল হয়েছিল। সে আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠীর গুলিতে জীবন হারিয়েছিল মোস্তফা ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুল প্রমুখ ছাত্র নেতারা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও একই পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নির্দেশিত ইউজিসির কৌশলপত্র প্রতিনিয়ত শিক্ষা ব্যবস্থা সংকোচিত ও বানিজ্যিকীকরণ করছে।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, বিগত ৫৪৩ দিন ধরে করোনার অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এত দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নজির পৃথিবীতে বিরল। যার ফলে ঝরে পড়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। তাদের বেশিরভাগ শ্রমিক মেহনতি দরিদ্র মানুষের সন্তান। অসংখ্য শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এছাড়াও বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী বেতন ফি সহ যাবতীয় শিক্ষা খরচ বইতে না পেরে ঝরে পড়বে বলে আশঙ্কা করছি। অবিলম্বে সরকারি খরচে ভর্তুকির ব্যবস্থা করে তাদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরাতে হবে।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজও পাহাড় ও সমতলে অসংখ্য জাতিসত্তার সন্তানেরা তাদের মায়ের ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। এসকল শিশুদের মায়ের ভাষায় শিক্ষার অধিকার দিতে হবে।
সমাবেশে ছাত্রনেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো আজ এক ফ্যাসিবাদী কারাগারে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগের গণরুম, টর্চার সেল, গেস্টরুম কালচারে সয়লাব। অচিরেই এ সমস্ত নিপীড়নযন্ত্র  বন্ধ করতে হবে এবং অতীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংঘটিত আবু বকর-যুবায়ের-আবরার হত্যা সহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে প্রক্টর সেল সহ প্রশাসনের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিপীড়নমূলক-অগণতান্ত্রিক আচরণ পুরো উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা কে ফ্যাসিবাদী কাঠামোতে অবতীর্ণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ও গণতান্ত্রিক চরিত্র হরণ করতে এখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হচ্ছেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরাতে সরকারি ও বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। একইসাথে উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সকল প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিন্ন বেতন কাঠামো ও অভিন্ন গ্রেডিং প্রণয়ন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এ্যানি চৌধুরি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকারি ভর্তুকি দিয়ে করোনাকালীন সময়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে ফিরিয়ে আনা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া, ইউজিসির কৌশলপত্র বাতিল সহ ৮ দফা দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। নতুবা সারাদেশের ছাত্র সমাজকে ঐকবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণের জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে আন্দরকিল্লা মোড়ে শেষ হয়।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ