ইকো’র উদ্ভিদ বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা উপস্থাপন,চট্টগ্রাম শহরে ৪৯৫ উদ্ভিদে ৩৬৬ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে

 হোসেন বাবলাঃ২৫আগস্ট
চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য নিয়ে পরিচালিত সামাজিক ওমানবিক সংগঠন ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়ন (ইকো) এর উদ্যোগেপরিচালিত গবেষণায় চট্টগ্রাম শহরে ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। গতমার্চ ২০২১ ইং হতে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় শনাক্ত মোট ৪৯৫ প্রজাতিরউদ্ভিদের মধ্যে ১৭৭ প্রজাতির বড় বৃক্ষ, ৮৬ প্রজাতির গুল্ম জাতীয়, ১৭৯ প্রজাতির বীরুৎজাতীয় ও ৫৩ প্রজাতির লতা জাতীয় উদ্ভিদ পাওয়া গেছে। আবার এর মধ্যে ৩৬৬ প্রজাতিরউদ্ভিদ পাওয়া গেছে যেগুলো ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিপণœ প্রায় ১৩টিএবং ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে এমন প্রজাতি পাওয়া গেছে ১৩৭টিরও বেশি। ৩০টির বেশিপ্রজাতি পাওয়া গেছে যেগুলো এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি গবেষক দল।
 ইকো পরিচালিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে আজ ২৪ আগস্ট সকাল ১১ টায় চট্টগ্রামপ্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইকোর সাধারণ সম্পাদক ড.মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ইকো’র সভাপতিমোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এস এম আবু ইউসুফসোহেল, সাহেদ মুরাদ সাকু প্রমুখ।চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্পটে জরিপের মাধ্যমে উদ্ভিদ শনাক্ত করে গবেষণার মাধ্যমেআটটি শ্রেণিতে এদের ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড় বৃক্ষ, গুল্ম জাতীয়, বীরুৎজাতীয়, লতা জাতীয় ও ঔষধি উদ্ভিদ। এছাড়া বিপণœ প্রজাতি, ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হবে এমনএবং এখনো শনাক্ত করা যায়নি এমন প্রজাতিও রয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা
হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় ২০১ প্রজাতি, নগরীর ডিসি হিলে ১৩২প্রজাতি, ওয়ার সিমিট্রিতে ৯১ প্রজাতি, টাইগারপাসে ২১০ প্রজাতি, রেলওয়ে সেগুনবাগান এলাকায় ৪৯ প্রজাতি, কানন ধারা আবাসিক এলাকায় ১৩৫ প্রজাতি, গোলপাহাড়এলাকায় ১২৭ প্রজাতি, ডাকবাংলো পাহাড়ে ১০৬ প্রজাতি, ডানকান পাহাড়ে ১৮১প্রজাতি, গোলাপ মিয়া পাহাড়ে ১৫৯ প্রজাতি, বায়োজিদ-ভাটিয়ারি লিংক রোডে ২১৬
প্রজাতি, জয় পাহাড়ে ২০৭ প্রজাতি, মতিঝর্ণা এলাকায় ১৯৯ প্রজাতি, মেরিন ড্রাইভে৪৫ প্রজাতি এবং ওমরগণি এমইএস কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে ১৩০ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্তকরা হয়েছে। শনাক্ত মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩৫৪টি দেশীয় প্রজাতির। বাকি১৪১টি বিদেশি প্রজাতির। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগেরসহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা
কার্যক্রমে গবেষণা দলে সহযোগী হিসেবে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরউদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, সজীব রুদ্র,আরিফ হোসাইন, সনাতন চন্দ্র বর্মন, মো. মোস্তাকিম এবং ইকরামুল হাসান।পাহাড় নিধন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি যদি বন্ধ করা না হয়তাহলে ভবিষ্যতে ইকো’র গবেষণায় সনাক্তকৃত ১৩ প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ এবং ৩৬৬টি ঔষধি উদ্ভিদসহ মোট সনাক্তকৃত ৪৯৫ টি উদ্ভিদের মধ্যে অনেক উদ্ভিদ হারিয়েযাবে যা চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ বিনষ্ট করবে বলে আশংকা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনেইকো’র পক্ষে কিছু সুপারিশও করা হয়।
পরিবেশ বিপর্যয় রোধে অবিলম্বে পাহাড় নিধন,পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া এবংভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এই ৪৯৫ টি উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণে কার্যকরপদক্ষেপ নেওয়া যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। সংরক্ষণের জন্যসৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিদেশী উদ্ভিদের পরিবর্তে দেশীয় ফলজ, বনজ ও ঔষধি উদ্ভিদব্যাপকহারে রোপণের জন্য জনগণদের সচেতন করার পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে এব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ইকো কর্তৃক প্রস্তাবিত সড়ক-মহাসড়কের পাশেএবং বিভাজকে তিনস্তরে ঔষধি ও দেশীয় ফলজ গাছ রোপণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিবিবেচনার আহবান জানানো হয়।আমাদের সংস্থা ইকো বিশ্বাস করে এই গবেষণা ভবিষ্যতে যারা উদ্ভিদ বৈচিত্র্য এবং ঔষধি
উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করবেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করবে। পাশাপাশি অন্যান্যগবেষকদের এই ধরনের গবেষণাকর্মে উৎসাহ প্রদান করবে।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ