ক্রীড়া ডেস্কঃ০৭আগস্ট
শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরো ঝরো ঝরতেই খুশিতে বেজে উঠল মনের সেতার। খটকাও হলো সময়মতো মাঠে গড়ানো নিয়ে। বৃষ্টি খেলাটা একটু পিছিয়ে দিল, এই যা। তারপর সন্ধ্যা নামল শঙ্কার দীপ জ্বেলে। রজনী তখনও বাকি। কে জানত, রাতটা এত মোহনীয়, মদির হবে।
ইতিহাস বলবে, এসো আমাকে আলিঙ্গন করো। মোস্তাফিজের স্বপ্নের বোলিং, মাহমুদ উল্লাহর ভীষণ প্রয়োজনীয় পঞ্চাশের জোরে ইতিহাস রাঙানো, হৃদয় জুড়ানো জয় এলো কাল রাতে, মিরপুরে। অসম্ভব এক ভালোলাগার ঐতিহাসিক জয়। ১০ রানের জয়ে কী বিপুল গরিমা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয়। বাংলাদেশ পেরেছে। কী অসাধারণ নৈপুণ্যভাস্বর ক্রিকেটশৈলি। দুই ম্যাচ হাতে রেখে ৩-০তে টি ২০ সিরিজ জয়। ক্ষুদে ফরম্যাটের সিরিজে হিমালয়তুল্য সাফল্যগাথা।
বিশ্বকাপের আগে এ যেন টাইগারদের বিশ্ব জয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।ম্যাচ ঠিক কোন জায়গায় জিতেছে বাংলাদেশ? অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ১৯তম ওভারে। যখন ওদের শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ২৩ রান। অসিদের কাছে এই সিরিজে ধাঁধা হয়ে থাকা মোস্তাফিজ ওই ওভারে দিলেন মাত্র এক রান। ওয়েডরা ওখানেই হেরে যান।
কোনো উইকেট না পেলেও বাঁ-হাতি মোস্তাফিজের বোলিং ফিগার জ্বলজ্বল করছে- ৪-০-৯-০। এজন্যই তিনি ‘ম্যাচের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়’। তার আগে ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতরানের মহামূল্যবান ইনিংস ৮১ রানে পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পৌঁছে দেয় ১২৭/৯-এ।
অস্ট্রেলিয়া এগোচ্ছিল ফর্মে থাকা মিচেল মার্শের উইলোর জোরে। কিন্তু ৫১ রানে শরীফুল তাকে থামাতেই ফুটো হয়ে যায় অসিদের আশার বেলুন। অ্যালেক্স ক্যারি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ১৫ বলে তার ২০* রান অতিথিদের হার এড়ানোর জন্য যথেষ্ট হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ১১৭/৪।
শেষ ওভারের প্রথম বলে মেহেদী হাসানকে ছক্কা মেরে অ্যালেক্স ক্যারি ক্ষণিকের জন্য আতঙ্ক ছড়ালেও শেষরক্ষা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। শরীফুল ইসলাম দুটি এবং নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান নেন একটি করে উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন মিচেল মার্শ।
ম্যাকডারমট ৩৫ ও ক্যারি ২০* রান করেন। দ্বিতীয় উইকেটে মার্শ ও ম্যাকডারমটের ৬৩ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম জয়ের আশা দেখালেও মোস্তাফিজের কিপটে বোলিংয়ে বাংলাদেশই হাসে শেষ হাসি। এই সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি ২০-তে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের।
তাদের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই একাধিক জয়ও ছিল না। এবার সব প্রাপ্তি ধরা দিল একসঙ্গে। সেটাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের ১৫ বছর পূর্তির দিনে।
লেগ-স্পিনার জাম্পার প্রথম বল সুইপ করতে চেয়েছিলেন বাঁ-হাতি সৌম্য। বল তার সামনের প্যাডে লাগে। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি বাংলাদেশি ওপেনার। স্বাগতিকরা তিন রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় তৃতীয় ওভারে। হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। ভালোই ব্যাট করছিলেন সাকিব। পয়েন্ট ও কভার-পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে অ্যাগারকে চার মারার পর কিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল ভাসিয়ে এলিসকে বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। এরপর মার্শকে পরপর দুটি চার।
কিন্তু ভালো খেলতে থাকা সাকিব জাম্পার অফ-স্টাম্পের বাইরের বল বোলারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে ধরা পড়েন অ্যাগারের হাতে। ১৭ বলে তার ২৬ রানের ইনিংস সেখানেই শেষ। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রানের জুটি। প্রথম ১০ ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ তিন উইকেটে ৬০।
বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায় আফিফ হোসেনের রানআউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। কভার থেকে ক্যারির সরাসরি থ্রো আঘাত করে স্টাম্পে। ১৩ বলে ১৯ রান করেন আফিফ একটি করে চার ও ছয়ে। শামীম হোসেন টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।
আট বলে তিন রান করে হ্যাজলউডের শিকার হন তিনি। মিডউইকেট অঞ্চলে ক্যাচ নেন ম্যাকডারমট। বাংলাদেশ ৮১/৫। তখনো ইনিংসের ছয় ওভার বাকি। সেখান থেকে বাংলাদেশকে নয় উইকেটে ১২৭ রানের মাঝারি পুঁজি এনে দেন মাহমুদউল্লাহ একাই।
শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৫৩ বলে করেন ৫২ রান। টি ২০-তে এটি মাহমুদউল্লাহর পঞ্চম ফিফটি, অধিনায়ক হিসাবে প্রথম। শেষ ওভারের শেষ তিন বলে মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসানকে ফিরিয়ে নিজের টি ২০ অভিষেক স্মরণীয় করে রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণ পেসার নাথান এলিস।প্রথম বোলার হিসাবে টি ২০ অভিষেকে হ্যাটট্রিকের কীর্তি এখন তার। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি ২০-তে এটি ১৭তম হ্যাটট্রিক।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি ২০ সিরিজ জয় করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
Discussion about this post