ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া অক্সফোর্ডের তৈরি করোনাভাইরাসের ৩ কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোভিড-১৯ সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অক্সফোর্ডের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট।তিনি বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য অক্সফোর্ডের তৈরি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৩ কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন।
গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাথে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থনৈতিক ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাব চলে এসেছে।’ভ্যাকসিন কারা পাবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা গাইডলাইন আছে। প্রথম কারা পাবে, দ্বিতীয় ধাপে কারা পাবে সে অনুযায়ী তারা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) একটা প্রোগ্রাম ডেভেলপ করছে।
ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, পুলিশ, প্রশাসনের লোক যারা মাঠে চাকরি করছে, তারপর বয়স্ক লোক, শিশু- এ রকম একটা প্রটোকল আছে।তিনি আরো বলেন, ‘মানুষকে এ ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়া হবে। টাকা সরকার পে করে দিচ্ছে। তিন কোটি ভ্যাকসিন ফ্রি দেয়া হবে।’
ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।সরকার কত টাকায় ভ্যাকসিন কিনছে- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ক্রয়ের চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।অন্যান্য ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আরো অনেকগুলো ভ্যাকসিনের বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যোগাযোগ রাখছে। এখনই বলা যাচ্ছে না কোনটা বেশি ইফেকটিভ হবে।
আমাদের এক নম্বর কন্ডিশন হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মানতে হবে।চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের টিকার ট্রায়াল হওয়ার কথা ছিল, সেটি কোন পর্যায়ে আছে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা রিজেক্ট করেনি। ওরা একটা টাকা চাচ্ছে। সরকার এখনও দেয়নি বা রাজি হয়নি। আমরা সেটা এখনও বাতিলও করিনি।
প্রথমে টাকা চায়নি, পরবর্তীতে টাকা চাচ্ছে।এদিকে সবার মধ্যে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে শক্ত অবস্থানে সরকার। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের ‘কঠোর অবস্থানে’ যাওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগেই আমরা বলেছি– এ সপ্তাহ থেকে আরেকটু স্ট্রং অ্যাকশনে যাব। আমার মনে হয় মাস্ক ব্যবহারে ঢাকার বাইরে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ডিসিরা বলছেন, জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি সতর্ক হচ্ছে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন.‘ঢাকার লোকজন এখনও পুরোপুরি কেয়ারফুল হয়নি। কেউ মাস্ক না পরে বাইরে এলে জরিমানা করা হবে। ফাইন দিতে হবে ৫০০ টাকা।
এখন থেকে ম্যাক্সিমাম ফাইন করা হবে। এতেও কাজ না হলে আমরা আরও ইনস্ট্রাকশন দেব, বলেছি সর্বোচ্চ জরিমানা করতে।তার পরও মাস্ক না পরলে কী হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তার পরে জেলে যেতে হবে, লোকজন যদি সতর্ক না হয় আর কি করা যাবে। আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না, আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে, আমরা বলে দিয়েছি।
Discussion about this post