হার বলতে অামার জীবনে কিছু নেই বললেন,বান্দরবান পার্বত্য জেলার মানবাধিকার নেত্রী কবি নীলিমা অাক্তার নীলা। এদিকে শৈশবকালে ৯/১০ বছরের শিশুদের দাবা প্রতিযোগিতায় ৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বান্দর বনকে তাক লাগিয়ে দেন।
আর সেই আনন্দে সারারাত মেয়েকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বাবা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোমেন। বাবার সে আনন্দ কোনদিন ম্লান হবে না অশ্রু সজল নয়নে বলেন তিনি। সাবেক জেলা প্রশাসক জনাব নাজমুল আলম সিদ্দিকী মহোদয় নীলিমা আক্তার নীলাকে টেবিলের উপর বসিয়ে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার হাতে তুলে দেন।
সে আনন্দ আজ স্বপ্ন। স্কুলে লেখাপড়া করা অবস্থায় মৌলিক শিক্ষা শিশুদের পড়িয়ে ৩ বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত হন তিনি। তখনকার বান্দরবান পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আইয়ুব চৌধুরী মহোদয় পুরস্কার দেয়ার সময় বলেন, তুমিও তো শিশু।এমন কৃতিত্ব কী করে সম্ভব? তুমি আমাকে আশ্চর্যান্বিত করলে।
বাবার মৃত্যু হঠাৎ করেই যেন পৃথিবী অন্ধকার করে দিল তার। মৃত্যুর আগে বাবা বলেছিলেন, কোনদিন অন্যায় করবে না,ঘুষ খাবেনা, মানুষকে ঠকাবে না, সততার সাথে তোমার লেখালেখি চালিয়ে যাবে,যত কষ্টই হোক কখনো নুয়ে পড়বে না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে না মা।
একজন সৎ ব্যক্তি অসৎ ব্যক্তির চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী।
বাবার কথাগুলো প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে তার
। কথা গুলো তাকে এখনো অনুপ্রাণিত করে উৎসাহিত করে। হেরে যেতে যেতে আবারও জিতে যান নীলিমা। বাবার মৃত্যুর পর হাজারো আপন মানুষের মধ্যে একজন আপন মানুষও ছিলো না তার।কেউ একজন এসে পাশে দাঁড়ালো না। সে মর্মান্তিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নীলিমা।
লড়াই করতে হয় একাই। সে বাজিতে আত্মবিশ্বাসী নীলিমা। তবু নিজের উপর রাগ করে অভিমান করে ৮ টি বছর তিনি লেখালেখি করেননি।কারোর সাথে কথা বলেননি। আর সে ৮ টি বছর তিনি এখনো খুঁজে ফিরেন ভারাক্রান্ত মনে আকাশের দিকে চেয়ে।
নেত্রকোনা কৃষ্ণপুর ডিগ্রী কলেজে বিএ পরীক্ষা দিয়ে আবারও ফিরে আসেন বান্দরবানে।গড়ে তোলেন হিলটপ এনজিও।অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষের বিপদে তিনি প্রতিবাদ করেন মাথা উঁচু করে। প্রতিবাদী হতে শিখান সবাইকে। একদিন এই প্রতিবাদী কবি নীলিমার হাতে চলে আসে বিরাট চমক। আলোর প্রদীপ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন – BHRC। নিমিষে উধাও হয়ে গেলো অন্ধকার ছড়িয়ে পড়লো আভা।
হারিয়ে যাওয়া আসমাকে উদ্ধার,অপহরণের ৩ বছরের শিশু পূরবীকে উদ্ধার, অং মেচিং মারমার মৃত্যুর রহস্য, শত শত পরিবারকে মিলিয়ে দেয়া প্রতিদিনই আলোচনায় ছিলেন মানবাধিকার নেত্রী নীলিমা। মৃত্যুর হাত থেকেও বেঁচে এলেন
অনেকবার। মানবাধিকার কার্যক্রমে মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই হাতে এলো, শ্রেষ্ঠ মানবাধিকার পদক, তারপর একে একে বঙ্গবন্ধু গুণীজন স্মারক সম্মানা,জাতীয় মানবাধিকার স্বর্ণ পদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি স্মৃতি সম্মাননা, বাতায়ন গুণীজন শাইনিং
এ্যাওয়ার্ড ( ভারত), জাতি সংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান গোল্ড মেডেল, নেলসন ম্যান্ডেলা গোল্ড মেডেল, আন্তর্জাতিক যুব দিবস স্বর্ণ পদক,, হিউম্যান রাইটস পিস এ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা শাইনিং এ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা স্মৃতি পদক,মহাত্মা
গান্ধী স্মৃতি পদক, কবি শামসুর রাহমান সম্মাননা, আন্তর্জাতিক মানবতা পদক সহ ৩৬ টি পদক এবং সম্মাননা ২ বছরে এতো অর্জন মানুষের ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ আমি সততার সাথে আগলে রাখতে চাই। মানুষের ভালোবাসায় হোক আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পদক বলেন,কবি নীলিমা আক্তার নীলা।
এই পর্যন্ত ৬টি কবিতার বই বেরিয়ে অাত্ন প্রকাশঘঠে। তার নিজের গড়া আব্দুল মোমেন,স্বপ্নের পাঠাগার, হিলটপ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, হিলটপ এনজিও, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সব মিলে দিব্যি সময় কাটাচ্ছেন তিনি। মানুষের দোয়া, ভালোবাসা নিয়েই একমাত্র জীবনের পথ শেষ করতে চান বান্দরবান পার্বত্য জেলার মানবাধিকার নেত্রী কবি নীলিমা আক্তার নীলা।
Discussion about this post