আজ এক যুগ
নীলিমা আক্তার নীলা
——————————
এখনো মনে হয়
তুমি আসবে
এখনো মনে হয়
কথা রাখবে।
আজ এক যুগ
হৃদয়ের পাতায়
হাজারো শোক
হাজারো শোক
এখনো মনে হয়
সব
সব শোক
তুমি কেড়ে নিবে।
এখনো মনে হয়
তুমি আসবে
তুমি আসবে।
করিডোরে দাঁড়িয়ে
কফি হাতে
এখনো অপেক্ষায়।
এখনো চোখের কোনে
জলের বাসা বাঁধে
খন্ড খন্ড চিত্র
এখনো সামনে এসে দাঁড়ায়।
তোমার হাসি
তোমার চঞ্চলতা
অভিমানী মুখখানা
এখনো আমায়
অস্হির করে তোলে।
আমার সামান্য ব্যথা
তোমার কাছে ব্যথার রাজ্য ছিল
কখনো ডাক্তার
কখনো এম্বুলেন্স
কখনো বা তোমার
আবেগপ্রবণ কন্ঠস্বর
আমাকে জানিয়ে দিত
তুমি আমায় কতোটা ভালোবাস
কতোটা ভালোবাসায় আমি আবদ্ধ।
প্রতিদিন আল্পনা দিয়ে সাজানো
আমার বাড়ি
নকশি কাঁথা দিয়ে রাঙানো
আমার ঘর
ঝলমল করে।
আমার পৃথিবী এখনো
স্বপ্ন দেখে-
তুমি আসবে
তুমি আসবে।
কলিংবেলের শব্দে
হোঁচট খেয়ে পড়ি আমি
মনে হয় এই বুঝি তুমি এলে।
প্রতিবার ব্যর্থতায়
অসহায় চোখ দু’ টো ভিজে যায়।
এক যুগ আগে
তুমি আসবে বলে-
বেড়িয়ে গিয়েছিলে
এলেনা।
তোমার গায়ের রক্তাক্ত ছেঁড়া শার্টটি
কে যেন রেখে গিয়েছিলো,
দরজার পাশে।
শার্টটি বুকে জড়িয়ে
এখনো কাঁদি
এখনো অপেক্ষা করি
এখনো ভাবি-
তুমি আসবে
তুমি আসবে।
——————————বৃদ্ধাশ্রম
নীলিমা আক্তার নীলা
——————————
বাবা তোমার কষ্ট দেখেছিলাম
দু’টো চোখে জল দেখেছিলাম
দেখেছিলাম মুখে দু’টো হাত চেপে
লুকানো তোমার ব্যর্থতা
তোমার পরাজয়
তোমার কষ্ট
মুচড়ে পড়া আহত যন্ত্রণা দেখেছিলাম।
তবুও তুমি বলেছিলে-
আমার সন্তানরা মানুষ হয়েছে
আমি সুখী মানুষ
সুখী মানুষ
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
আমার মতো সুখী মানুষ
আর কেউ নেই
কেউ নেই।
বলেছিলে এতো সুন্দর কথাটি
শব্দ করে কেঁদে
বৃদ্ধাশ্রমে দাঁড়িয়ে।
তোমার কান্নার শব্দে
হয়তো
কেঁদে উঠেছিলো পৃথিবী
পৃথিবীর মাটি
কষ্টে বুক ফেটে গিয়েছিল
হয়তো কারোর।
বাবা তোমার কান্না লুকাতে গিয়েও
লুকাতে পারনি
বেড়িয়ে এসেছিলো সমস্ত যন্ত্রণার ব্যর্থতার লালিত কষ্ট
এক নিমিষে।
আমি দেখেছিলাম-
কষ্টে কষ্টে লুটিয়ে পড়া
তোমার আহত জীর্ণদেহ
সাদা কাফনে জড়ানো
তোমার বেদনার্ত মুখমন্ডল
চোখের কোণে কান্নার দাগ।
বাবা তোমায় দেখেছিলাম,
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে
উঁকি দিয়ে।
নীরব একটি ঘরে
তোমার কষ্ট ছড়িয়ে পড়েছিলো
যেখানে তোমার আপন
কেউ ছিলনা।
কেউ ছিলনা।
হয়তো
তুমি অনেকটা বছর অপেক্ষা করেছিলে
কেউ আসবে
এসে বলবে-
চলো বাবা
চলো
বাড়িতে সবাই তোমার জন্য
অপেক্ষা করছে
অধির আগ্রহে।
সে সান্ত্বনাটাও পাওনি তুমি
জীবনের শেষ মুহূর্তে।
Discussion about this post