মাত্র ১৮০ দিন মেয়াদের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া খোরশেদ আলম সুজন বন্দর নগরীকে বাসযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন’ করার এক উচ্চাভিলাষী স্বপ্নপূরণ করতে চান।
দায়িত্ব নিয়ে রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘স্বপ্নপূরণের’ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলছেন, চট্টগ্রাম সিটির স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে তিনি ‘পুনরুজ্জীবিত’ করতে কাজ শুরু করবেন।
এক সপ্তাহ পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে আলাপচারিতায় সিটি করপোরেশন পরিচালনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
প্রশ্ন ছিল স্বল্প সময়ে কী কী পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছেন তিনি? ১৮০ দিনে কীভাবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বপ্ন পূরণ’ করবেন
শহরের সবখানে রাস্তায় যেখানে বাতি আছে সেখানে আলো যেন জ্বলে। ময়লা আর্বজনা যেখানে সেখানে খোলা অবস্থায় অস্বাস্থ্যকরভাবে যেন পড়ে না থাকে। হাইজিনেশন নিশ্চিত করতে চাই।
আওয়ামী লীগ নেতা সুজন বলেন, “একটা কথা আছে, যার হয় তার শুরুতেই হয়। কাজ শুরু করেছি, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ১৮-১৯টা রাস্তায় কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর চালু করা স্বাস্থ্য প্রকল্প ধ্বংস হয়ে গেছে, শিক্ষাও ধ্বংসপ্রাপ্ত। সেগুলো পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করব যতদূর পারা যায়। আমি শুরু করতে চাই। যাতে পরে যিনি আসবেন তিনি যেন এগিয়ে নিতে পারেন।
মহিউদ্দিন ভাই আয়বর্ধক অনেক প্রকল্প নিয়েছিলেন। আবর্জনা থেকে সার উৎপাদনের প্রকল্প নিয়েছিলেন। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সচল করতে চাই
নগরীর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম গতিশীল করার পাশাপাশি পলিথিনের ব্যবহার কমাতেও উদ্যোগী হবেন বলে জানান সুজন।
তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নতার কাজে যারা আছেন তারা আগের মত বসে বসে মুখে মুখে কাজ দেখালে হবে না। দৃশ্যমান যেন হয় সেরকম কিছু করতে চাই।
এ লক্ষ্যে একমাসের মধ্যে সড়ক থেকে চলাচলের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চান বলেও জানিয়েছেন সুজন।
পুলিশের সাথে কথা হয়েছে। রাস্তা বড় হলে সেটা গ্যারেজ হয়ে যায়। রাস্তা দখল করে গাড়ি ফেলে রাখলে প্রথমবার পাঁচ হাজার, দ্বিতীয়বার ১০ হাজার, তৃতীয়বার ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। রাস্তার গাড়ির বিষয়ে পুলিশ সহায়তা করবে। সড়কের জায়গায় কোনো ধরণের অবৈধ স্থাপনাও থাকতে পারবে না।
উন্নয়ন কাজের সমন্বয়ের জন্য বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে নিয়ে একটি সেবা সমন্বয় টিম করা হবে বলেও জানান প্রশাসক।
ফুটপাত পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করতে নিজের ‘পরিকল্পনা’ আছে জানিয়ে সুজন বলেন, হকারদের নিয়ে প্ল্যান আছে। কাউকে উচ্ছেদ করব না। তবে ফুটপাতে নগরবাসীর চলাচলের সুযোগ থাকতে হবেই।আদর, স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে হকারদের বুঝাবো। কিছুতেই কাজ না হলে তখন জবরদস্তি করব। তবে সেটা করতে চাই না।
নগরীর ফুটপাতগুলোতে সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে ‘দোকানের সৌন্দর্য্য বর্ধন’ হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুজন।
সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদেই নগরীতে সৌন্দর্য্য বর্ধনের বেশকিছু প্রকল্প নেয়া হয়।
এ বিষয়ে সুজন বলেন, সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে যেটা হয়েছে সেটা দোকানের সৌন্দর্য্য বর্ধন। অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হবে। সেটা অবিলম্বেই শুরু করব।
বিদায়ী মেয়র প্রায় আটশ কোটি টাকা দেনা রেখে গেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর শেষ কয়েক মাসে সিসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হয়েছে।
এত দেনা নিয়ে সিটি করপোরেশনের ব্যয় কিভাবে নির্বাহ করবেন জানতে চাইলে সুজন বলেন, “আমি সরকারকে লিখেছি। দেখি কী করা যায়। কোথাও না পেলে চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইব। বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হোল্ডিং ট্যাক্স যা আসে সেগুলো হলে চেয়ে নেব।
সাধারণ মানুষ যেমন ট্যাক্স দেয়, তারাও (সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো) শহরের অবকাঠামো ব্যবহারকারী। বন্দর চেয়ারম্যান সজ্জন ব্যক্তি। আশাকরি তিনি ফেরাবেন না।
পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন জানিয়ে প্রশাসক সুজন বলেন, রাজস্ব বিভাগকে বলেছি এতদিন যেভাবে চলেছে তা হবে না। যারা ভালো কাজ করবেন তাদের পুরষ্কার দেয়া হবে। যারা ভুল করবেন তাদের শাস্তি দেয়া হবে।নগরবাসীর কাছেও সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, আমি নগরবাসীকে কাজ বুঝিয়ে দিতে চাই। পয়সা দিবেন (হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্ন কর ও ফি) কাজ বুঝে নিবেন। বিল না দিলে কী গ্যাস, বিদ্যুত, পানি চলে? করপোরেশনের সেবা পেতে হলেও তেমন কর দিতে হবে।
নগরীর যে কোনো সমস্যা টেলিফোনে, এসএমএসে, মোবাইলে ছবি তুলে ফেসবুকে, হোয়াটস এপেসহ যে কোনো উপায়ে জানাতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান সুজন।
সমস্যা জানতে আমিই নগরবাসীর কাছে যাব। আমার কাছে আসতে হবে না। শুধু আমাকে জানান, তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরীর প্রত্যেক বাসিন্দাই প্রশাসক, আমি সমন্বয়কারী মাত্র।
Discussion about this post