করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছুটি শেষ হওয়ার পরই খুলবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছুটি আরো বাড়বে।
চলমান পরিস্থিতিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আর সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমেই শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভুয়া আইডি থেকে ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ‘গুজব’ ছড়ানো হয়। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবকই স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন।
তবে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
অথচ আমাদের নাম দিয়ে কখনো জাতীয় শিক্ষা বোর্ড নামে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় শিক্ষা বোর্ড নামে কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই।’
দীপু মনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছি। যখন সময় হবে আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে জানিয়ে দেব, কখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, কখন পরীক্ষা নেওয়া হবে।’ শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে গুজব ছড়ানো হলে বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মে. আকরাম-আল-হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। তবে বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের দেখতে হবে। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভিভাবকদের অনেকেই জানতে চান, কবে স্কুল খুলবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগই স্কুল খোলার বিপক্ষে। আমার মনে হয়, যখন সব ধরনের অফিস-আদালত স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে তখনই স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি ভাবা উচিত।
তাড়াহুড়া করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে বড় বিপদে পড়তে হবে। আর যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয় তখন বড়দের প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যায়ক্রমে ছোটদের প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।’
পৃথিবীর যেসব দেশ করোনাকে প্রায় জয় করে ফেলেছে, তারা এরই মধ্যে স্কুল খুলে দিয়েছে। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে স্কুল খুলতে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। বিশেষ করে, স্কুলে ঢোকার সময় শিশুদের হাত ধোয়া, ক্লাসে শিক্ষার্থী কমিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি।
এ ছাড়া তাদের স্কুলগুলোতে প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থীসংখ্যা ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে একটি শ্রেণিতে ৪০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকে। ফলে এখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব নয়।
সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ ভিন্ন রকম হবে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামীতে কিছু ক্লাস সরাসরি, কিছু অনলাইনে এবং কিছু অফলাইনে নিতে হবে। শিক্ষকদের ভূমিকাও বদলাতে হবে। তাঁরা হবেন পথপ্রদর্শকের মতো।
পরীক্ষাপদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে শিক্ষকদের এ ব্যাপারে আগেভাগেই প্রস্তুত করে তুলতে হবে।’
Discussion about this post