দেশের কোনো ছোট বড় নেতা চলে গেলে চারিদিকে হৈচৈ পরে যায়। কোনো বলিউড অভিনেতা অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমবেদনা, শোকাতুর পোস্ট এর ঝড় বয়ে যায়।
আর ২৯মে ঝড়ের রাতে একটা নার্সিং অফিসার কর্মরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে নিজেই শয্যাশায়ী রোগী হয়ে মা’রা গেলেও কেউ জানতে পারে না। সুনীতা মন্ডল, পেশায় সেবাব্রতী (নার্স)। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কো’ভিড ওয়ারিওর। আমরা আমাদের আর এক সহযোদ্ধাকে হারালাম।
ব্যক্তিগত সূত্রের খবর, PCOD ছিলো, সেদিন হটাৎ করে পেটের ব্যথা আর প্রচন্ড বমি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কোনো ফ্লুইড, ওষুধ কাজ করেনি, ইউরিন আউটপুট ভালো ছিলো না, প্রেসার ৬০/১০০, কিডনি ফেইলিওর। MMCH এর CCU থেকে
NRS আর SSKM এ রেফার করলেও বাড়ির লোক আনতে পারেনি, কারণ জানা যায় সেখানে পর্যাপ্ত বেডের অভাব রয়েছে।
সুনীতা নিজে একজন স্বাস্থ্যকর্মী হলেও যখন তার নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, সেখানে হাসপাতালে তার জন্য বেড পাওয়া যায়নি। কারণ আমাদের মেডিকেল সিস্টেম বর্তমানে মহা’মারী সামলাতেই পুরোপুরি বিধ্ব’স্ত।
অন্যের সেবা করা একজন সেবিকা শেষে নিজের জন্য কোনো পরিষেবা পেলেন না। সরকারি হাসপাতালে ভর্তির কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তাই অপেক্ষা না করে বাড়ির লোক শেষমেষ সুনীতা কে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।
বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তারবাবু জানান অবস্থা মোটেও ভালো না। ইনটুবেট করা হয়, ২ বার ডায়ালিসিস ও করা হয়। কিন্তু ডাক্তারদের সব চেষ্টা বিফলে যায়।
একদিকে যেমন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে যাচ্ছিল ওপর দিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পরিবারের আর্থিক সক্ষমতাও কমতে থাকে।
জবনে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। সবে মাত্র দেড় বছর হয়েছিল এই প্রফেশনে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই সব স্বপ্ন ধূলি’সাৎ হয়ে গেল। কতটুকুই বা বয়স তার জীবন যার শুরু হলোনা মোটেই! অচিরেই নিভে গেল।
ভীষন প্রাণবন্ত, সদা প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে। মানুষের সেবা করা, কাজটিকে সে খুব ভালোবাসত। সারাক্ষন নিজের কাজ নিয়েই থাকত। কাজের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকায় তার মধ্যে ছিল না ক্লান্তির ভাব।
এই সেদিনও যে মেয়েটি সারা ওয়ার্ডময় ঘুরে ঘুরে রোগীকে সেলাইন চালিয়েছে, মেডিসিন খাইয়েছে , ইজেক্শন দিয়েছে, জ্বর মেপেছে, সুগার-প্রেসার চেক করেছে, খাবার খাইয়েছে, কখন কাউকে এক ইশারায় গোল্লা পাকানো চোখ দেখিয়ে চুপ করিয়েছে, কারোর মাথায় হাত রেখে সেরে ওঠার ক্ষমতা জুগিয়েছে অন্যকে, সে নিজেই আজ চুপ, অচল, অসাড়।
নিজেই আর সেরে উঠতে পারল না। সে আর কোনো পেশেন্ট এর নাম আর বেড নাম্বার ধরে ছুটি নিয়ে যাও বলে ডাক দেবেনা। সে নিজেই ছুটি নিয়েছে যে চিরতরে।
সুনীতা তোমার অসুম্পূর্ণ লড়াই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। এ লড়াই আমরা জিতব। তুমি তোমার সহকর্মী সহযো’দ্ধাদের মাঝেই বেঁচে থাকবে । তবে, আমি বলবো তুমি আবার ফিরে এসো আমাদের মাঝে, আমাদের সহযো’দ্ধা হয়ে।
সুনীতা মন্ডল” ২০ বছরের এই মেয়েটি নিজের জীবন দিয়ে অন্যের সেবায় চিরতরে বিদায় নিল। যে বয়সে অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সোশ্যাল মিডিয়ায়, গেমস গেলে সময় অতিবাহিত করতে দেখা যায়, সেখানে সুনীতা আমাদের যুব সমাজের সামনে এক উদাহরণ রেখে গেল।
একজন সেবিক হিসাবে জীবনের শেষ নিশ্বা’স পর্যন্ত ওপরের সেবা করে গেছে। আজ চলে গেছে না ফেরার দেশে। আমাদের তরফ থেকে তাকে জানাই স্যালুট, এবং তার পরিবারের প্রতি রইল সমবেদনা
Discussion about this post