করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় একাই লড়ছেন শেখ হাসিনা। এই লড়াইয়ে প্রথম দফায় তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করেছেন এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে শেখ হাসিনা যারা এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে না, যারা এই করোনা মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে না, যারা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এই কর্মপ্রবাহকে ব্যহত করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে। এই অ্যাকশন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে।*
সরকারের একজন নীতিনির্ধারক বলেছেন, শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হচ্ছে এবং ঈদের পরপরই তিনি করোনা মোকাবেলায় কোনরকম যেন গাফিলতি না হয়। অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটয়ে উঠতে যেন বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি না হয়- সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাবেন এবং এই ব্যাপারে তিনি অ্যাকশন শুরু করবেন।*
*সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব টিম এবং তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছেন। ঈদের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন পাঁচটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।*
১. স্বাস্থ্য খাতে ব্যর্থদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বড় ব্যর্থতা এই করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতি, সমন্বয়হীনতা নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের কারোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং যারা এই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতি নিয়ে কথা বলেছে, যারা নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই নিয়ে কথা বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এটা প্রধানমন্ত্রীর কানে এসেছে এবং স্বাস্থ্যখাতে যারা ব্যর্থ যারা এই ধরণের অনিয়মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টিম এই ব্যপারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে। খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্যখাতে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকশন দৃশ্যমান হবে বলেএকাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন।*
২. ত্রাণে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ত্রাণ বিতরণে যে অনিয়মগুলো হয়েছে যেগুলো কারা করেছে এবং কিভাবে করেছে তা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টিম খোঁজ খবর নিয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগের যারা এই সমস্ত অনিয়মের সাথে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সারাদেশে ত্রাণ বিতরণে যেন কোন অনিয়ম না হয় সেদিকে খোঁজ খবর নিচ্ছে। যারা অনিয়ম করবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাঁরা যেন দলীয় কোন পদে থাকতে না পারে এবং দলের পরিচয় বহন করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।*
৩. ত্রাণের তালিকা প্রণয়নে নিজস্ব উদ্যোগ: ত্রাণের তালিকা প্রণয়নের জন্য ইতিমধ্যে দ্বিমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রথমত স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে যারা বয়স্ক ভাতা বা কোন ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী পাননা কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনটনের মধ্যে পড়েছে- এরকম একটি তালিকা তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন, সহযোগিতা করছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে তালিকায় যেন কোন ধরণের বিচ্যুতি না থাকে, কোন প্রাপ্য লোক যেন বাদ না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এই তালিকা প্রণোয়নের ক্ষেত্রে যারাই নয়-ছয় করবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি নেয়ার কথা উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।*
*৪. পোশাক শিল্পে অতি লোভীদের চিহ্নিত করা: পোশাক শিল্পে কিছু কিছু অতি উৎসাহী ব্যবসায়ী তাঁরা নিজেদের মুনাফা লাভের জন্য নানারকম ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং দ্রুত পোশাক কারখানা চালুর জন্য সরকারের ওপর প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। এরা ঢাকার শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর কথা বলে ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিক এনে পূর্ণ উদ্যামে কাজ করছেন। এই সমস্ত বিষয়গুলোর সবই প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। পোশাক শিল্পের এই মালিকদের মধ্যে যারা অতি লোভি, যারা এই ধরণের অপরিণামদর্শী কাজ করেছে এবং এদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যথা সময়ে যথাযথ দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।*
৫. প্রণোদনা প্যাকেজে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা: সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বৃহৎ শিল্প থেকে একেবারে ক্ষুদ্র শিল্প- সব শ্রেনীর জন্য এই প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ রয়েছে এবং এই প্রণোদনা প্যাকেজে যেন কোনরকম পক্ষপাত, অনিয়ম না হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিজস্ব নজরদারির মাধ্যমে পরিচালিত হবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।*
*উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি করোনা সঙ্কট যখন বাংলাদেশে ধেয়ে আসে, কোনরকম পরিবর্তন না করে যা আছে তাই দিয়েই মোকাবেলার জন্য শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই কৌশলের কারণেই শেখ হাসিনা অনেককিছু সহ্য করেছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছে। পরিস্থিতি যখন একটি জায়গায় আসবে, তখনই শেখ হাসিনার অ্যাকশন দৃশ্যমান হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।*
Discussion about this post