বাংলাদেশে সোমবার পর্যন্ত ৮০৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তবে এই ভাইরাস বহনকারী হিসেবে শনাক্তদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরপর।
ঠিক ৩৭ দিন আগে, অর্থাৎ ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম দিন থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত করোনাভাইরাস বহনকারীদের শনাক্ত করতে সব মিলিয়ে ১১,২২৩ জনকে টেস্ট করা হয়েছে।
এই হিসেব অনুযায়ী, গড়ে প্রতিদিন ২১ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর ৮ই মার্চ বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করার পরের ছয় দিনে নতুন কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।
এরপর ১৫ই মার্চ শনাক্ত হয় আরও দু’জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী। এরপর নিয়মিতভাবে অল্প কয়েকজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ সময়ই অভিযোগ ওঠে যে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ঠ পরিমানে পরীক্ষা করছে না বলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সঠিক চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।
মার্চের ২৫ তারিখ কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি, তবে ২৬ তারিখ পাঁচজন আর ২৭ তারিখ চারজন রোগী শনাক্ত হয়। এর পরের তিনদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৫১ জন, আর এই সময় পর্যন্ত পরীক্ষা হয় ১,৬০২ জনকে।
তবে এরপর বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিত্র বদল হতে শুরু করে আস্তে আস্তে, যখন সরকার পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
শুরুতে মূলত কেন্দ্রীয়ভাবে আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করলেও এপ্রিলের গোড়ার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্যাম্পল সংগ্রহ কার্যক্রম সম্প্রসারণের কথা জাসায়।
গত ৩রা এপ্রিল যেখানে ২০৩টি পরীক্ষা করা হয়েছিল, সেখানে ৪ঠা এপ্রিল পরীক্ষা করা হয় ৪৩৪টি। এদিন মোট পরীক্ষা আড়াই হাজার ছাড়ায়, আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ জনে।
গত ৫ই এপ্রিল ১৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ঠিক একদিন পরেই শনাক্ত হয় ৩৫ জন।
৭ই এপ্রিল পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা জানানো হয়, আর এদিন শনাক্ত হয় ৪১ জন।
ওই দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট ১৬৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল, আর আজ ১৩ই এপ্রিল একদিনেই শনাক্ত হয়েছে ১৮২ জন।
অর্থাৎ যত বেশী সংখ্যায় পরীক্ষা করা হয়েছে, তত বেশী রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এখন প্রতিদিনই গড়ে এক হাজারের বেশী পরীক্ষা করা হচ্ছে। আজ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫৭০ জনের।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার নিশ্চিত করেছেন যে দেশে কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে।
ফলে বাড়তি রোগী সামাল দিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস চিকিৎসার হাসপাতালও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে করোনাভাইরাস চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হচ্ছে, আর ঢাকায় বেশ কয়েকটি হাসপাতালকে প্রস্তুত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন তৈরি করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য।
তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাথে আলোচনা চলছে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য – এর মধ্যে শাহাবুদ্দিন হাসপাতাল ও আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যোগ হচ্ছে।
এছাড়া জেলায় জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল যোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
খবর : বিবিসি বাংলা
Discussion about this post