করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মোংলা বন্দর কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা পশুর নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ বাণীশান্তা যৌনপল্লীটি অবশেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন (বন্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে।
নদীর পাড় ও গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত যৌনপল্লীতে গিয়ে দাকোপ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যৌথভাবে গত সপ্তাহে এ লকডাউনের ঘোষণা দেন। মো্ংলা বন্দরের পশুর নদীর পশ্চিম পাড়স্থ খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা যৌনপল্লীটির অবস্থান হলেও মুলত মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক লোকজনই এ পল্লীতে সবচেয়ে বেশী যাতায়াত করতো।
এ পল্লীতে ইতিমধ্যে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যরা নদীর পাড়ে যাতে কোন ট্রলার না ভেড়ে ও উদ্ভুদ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পল্লী এলাকায় সার্বক্ষনিক বিশেষ টহল ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে জানিয়েছেন দাকোপের পুলিশ প্রশাসন।
দাকোপের ইউএনও আঃ ওয়াদুদ বাগেরহাট২৪কে জানান, পশুর নদীর পাড়ের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বানীশান্তা যৌনপল্লীতে জায়গা কম, ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এ ছাড়া মোংলা বন্দরে আগত বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজের বিদেশী নাবিক (ক্রু) ও কার্গো কোষ্টার জাহাজের নাবিকদেরও এ পল্লীতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যৌথভাবে গত ২৪ মার্চ থেকে যৌন পল্লীটি অনির্দিষ্টকালের জন্য লক ডাউন করে দেয়। এ পল্লীতে ৮৭টি ঘরে প্রায় শতাধিক যৌনকর্মী ছাড়াও বাড়িওয়ালি, মাসি, দোকানদার ও প্রায় ৬৫ জন ছেলেমেয়েসহ অন্তত ৫ শতাধিক লোকের প্রতিনিয়ত আনাগোনা ছিল।
তিনি আরও জানান, মানবিক কারণে এ সময়ে যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি যৌনকর্মীকে ১০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে। অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক পরিবারকে আরো চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা দেবার দেয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে।
দাকোপ থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম চৌধূরী বাগেরহাট২৪কে জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পল্লী এলাকায় নদী পথে ট্রলার যোগে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ভুদ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পল্লী এলাকায় পুলিশ সার্বক্ষনিক বিশেষ টহল ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বানীশান্তা যৌন পল্লীতে গিয়ে কথা হয় যৌন কর্মীদের সংগঠন নারী জাগরনী সংঘের সভানেত্রী রাজিয়ার সাথে। তিনি চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা পাবার কথা স্বীকার করে বলেন, এখন পর্যন্ত যে সরকারী সহায়তা প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল।
পল্লীর প্রতিটি পরিবারে প্রায় ৩ থেকে ৭/৮ জন সদস্য রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের দেয়া ১০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা অনেকেরই শেষের পথে। এ ছাড়া অনেক যৌন কর্মীর জমানো অর্থও শেষ হওয়ার পথে। অপরদিকে প্রতিটি যৌনকর্মীকে বাড়িওয়ালাকে মাসিক দেড় হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।
অধিকাংশ বাসিন্দাই বকেয়া ঘর ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি। তারা কিভাবে বকেয়া ঘর ভাড়া পরিশোধ করবেন তা নিয়ে হা-হুতাশকরাসহ গভীর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। কেউ কেউ আবার ঘরের আসবাব পত্র বিক্রী করে খাবার সংগ্রহসহ সংসার চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় এ নেত্রী মানবিক কারণে আরো বেশী সরকারী সহায়তা বৃদ্ধি ও বকেয়া ঘর ভাড়া যাতে না নেয়া হয় তার জোরালো দাবি জানান।
Discussion about this post