মাহমুদ আহমদ : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
বর্তমান করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনের মাধ্যমে নিজেকে জীবানুমুক্ত রাখা। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার কথা ইসলাম বলে না বরং অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষাও দেয়। যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন।
প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহ তাআলার প্রেমিক তখনই হয় যখন তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজের বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতিও দৃষ্টি দেয়। ঈমানের দাবি করার পরে নিজেদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য, যেন আমাদের আত্মা ও দেহ একযোগে আল্লাহ তায়ালার প্রেম-ভালোবাসাকে আকৃষ্ট করতে পারে।
মহানবী (সা.) যেমন নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন তেমনি সকলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নসিহতও করতেন।
হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আত্তুহুরু শাতরুল ঈমান’ অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অবলম্বন করা ঈমানে অঙ্গ (মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, বাব ফাযলু ওয়াযু)।
উল্লিখিত হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, একজন মুমিনের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজেকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না বরং চারপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অনেকেই আমরা এমন আছি, যারা নিজের ঘরকে ঠিকই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন কিন্তু বাইরের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি দৃষ্টি রাখি না। এটা মোটেও ঠিক নয়। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখাও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা নিজেদের ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেই। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বিষয়ের প্রতি অধিক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। কেননা বাইরের পরিবেশ নোংরা হলে পুরো পরিবেশের ওপরই এর প্রভাব পড়বে।
রাস্তা-ঘাটে চলার পথে আমরা দেখতে পাই ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান থাকা সত্ত্বেও আমরা সেখানে না ফেলে যত্র-তত্র ময়লা ফেলে পরিবেশ নোংরা করি। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ যে আমি নষ্ট করছি, এর ফলে কিন্তু আপনার আমার সবার ক্ষতি হচ্ছে।
বর্তমান করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আমরা সবাই যেখানে আতঙ্কিত সেখানে শুধু নিজের ঘর আর নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবেশের নিরাপত্তার চিন্তাও আমাকে করতে হবে। আশপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা আপনার, আমার, সবার কর্তব্য।
মনে রাখতে হবে রাস্তা-ঘাট সব কিছুকেই আমাকে পরিষ্কার রাখতে হবে। হাদিস পাঠে আমরা জানতে পারি মহানবী (সা.) বিশেষভাবে রাস্তাঘাটের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। মহানবী (সা.) বলেন ‘যে ব্যক্তি চলার পথের পরিচ্ছন্নতার প্রতি যত্নবান হয় আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাকে সওয়াব দান করেন’ (মুসলিম)।
পরিশেষে-
আপনি আমি গ্রামে বা শহরে যেখানেই থাকি না কেন, আপনার আমার সবার নিজ এলাকা ও চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা একটি নৈতিক দায়িত্ব। যে কোনো রোগ-ব্যাধি অপরিচ্ছন্নতার কারণেই বেশি ছড়ায়। তাই করোনাসহ যে কোনো ধরনের সংক্রমক থেকে জীবানুমুক্ত থাকতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। তাই আসুন, আমরা সবাই নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি এবং আমাদের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখি।
Discussion about this post