অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশী কূটনীতিকদের জানিয়েছেন, সবকিছু সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে একটা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে।’ কিন্তু অন্তর্বতী সরকারের ম্যান্ডেটটা হচ্ছে- নির্বাচনটা তখনই করবেন যখন রিফর্মগুলো ক্যারি আউট করা যায়। যেটা জুডিশিয়ারি থেকে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে, সিকিউরিটি রিফোর্সে, মিডিয়াতে। সমস্ত কিছু উনি রিফর্ম অ্যাড্রেস করার পর অন্তর্বতী সরকার যত দ্রুত নির্বাচন করতে পারে, এটা হচ্ছে ওনাদের মূল কাজ।
রোববার (১৮ আগষ্ট) ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের আবাসিক প্রধানদের ব্রিফ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূস বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। দেশের মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছেন। নতুন প্রজন্ম তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যাংক ডাকাতি করা হয়েছে।
কূটনীতিকদের ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বতী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ মারা গেছে। অনেক ছাত্র চোখে গুলি খেয়েছে, আমি তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা জানি না, ওদের কি হবে। পৃথিবীর কোনো দেশের ছাত্রদের এত ত্যাগ করতে হয়নি। পৃথিবীর কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়নি। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, এটার গ্রহণযোগ্য ও পক্ষপাত অবলম্বন না করে একটা তদন্ত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে পূর্ণ সমর্থ দেবে।
ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা যে বাংলাদেশ চায় সেটা করার চেষ্টা করবেন। এমন একটা বাংলাদেশ যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, মানবাধিকার থাকবে। একইসঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
পরে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ব্রিফিংয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন সংস্থার ৫০ এর বেশি কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। কূটনীতিকরা কোনো প্রশ্ন করেছেন কিনা-জানতে চায় সাংবাদিকরা। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, প্রশ্নের উত্তর ছিল না। উনি সমর্থন চেয়েছেন। বাংলাদেশকে পুনর্র্নিমাণে পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন।
শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা কূটনীতিকদের জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র আন্দোলনের সময় যে হত্যাকান্ড ঘটেছে তাঁর নিরপেক্ষ তদন্তে জাতিসংঘ তদন্তদলকে স্বাগত জানিয়েছেন।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা উল্লেখ করে তিনি কূটনীতিকদের বলেন, ‘আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এই দেশের পুনঃনির্মাণের জন্য আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’ ব্রিফিং শেষে তিনি কূটনীতিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকার শপথ গ্রহণ করে। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন।
Discussion about this post