তৈয়বুর রহমান ঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে পরম আরাধ্য ব্যক্তিত্ব সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৯দিন নভেনা প্রার্থনার পর শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোড়া গ্রামে দুই দফায় খ্্িরস্টযাগে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হলো খ্্িরস্টান ধর্মাবলম্বীদের সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব। তীর্থ যাত্রীদের আগমনে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে গানে গানে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ।
১৬৬৩ সাল থেকে কালীগঞ্জের পানজোরা গ্রামে কয়েক লক্ষ্যাধিক মানুষের সমাগমে বিপুল উৎসাহ আর উদ্দীপনায় মধ্যেদিয়ে পালিত হচ্ছে সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব । নাগরী ধর্মপল্লী পালকীয় পরিষদের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৬টায় ও সকাল সাড়ে ১০টায় দুটি খ্্িরস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়। তীর্থোৎসবের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে কয়েক লাখ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী নর-নারী অংশ নেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় মহিলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসসাদিকজামান, উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক এইচ.এম. আবু বকর চৌধুরী,
পৌর মেয়র এস.এম রবীন হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিসুর রহমান, নাগরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. অলিউল ইসলাম অলি, তুমলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুবকর মিয়া বাক্কুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের মতে, মহান সাধু আন্তনীর জীবনে তিনি পিতা ঈশ্বরের দেয়া সদগুণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন।
তিনি মাত্র ১৭ বৎসর বয়স থেকে ঈশ্বরের কাজে নিবেদিত হয়েছিলেন এবং আমৃত্যু ঈশ্বরের রাজ্য বিন্তারে কাজ করেছেন। তিনি প্রায় একযুগ ধরে যারা ঈশ্বরের প্রতি, তার একমাত্র পুত্র প্রভু যীশু খ্রিস্টের প্রতি এবং মা মারীয়ার প্রতি যাদের বিশ্বাস ছিল না তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছেন ভক্তিমা দিয়ে।
তিনি তার জিহ্বা ব্যবহার করে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করেছেন। তার মনোমুগ্ধকর কথা শোনার জন্য দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো তার কাছে। মহান সাধু আন্তনী প্রভু যীশু খ্রিস্টের মতো অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন যা তার জীবদ্দশায় তাকে করেছে মহান। তার জীবনের অনেক ঘটনা আমরা বিভিন্ন পুস্তিকা পড়ে জানতে পেরেছি এবং আজও কোনো দ্রব্য হারিয়ে গেলে সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা করলে তা পাওয়া যায় বলে ভক্তদের বিশ্বাস।
তার মৃত্যুর এতো বৎসর পরও সাধু আন্তনীর নিকট প্রার্থনা করলে ফল পাওয়া যায়। সাধু আন্তনী অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন। তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্তকে ছুঁয়ে দিলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠত।
সাধু আন্তনী ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে (বর্তমান পর্তুুগাল) জন্মগ্রহণ করেন। তার কর্মজীবন কাটে ইতালির পাদুয়ায়। সাধুর অনুসারীরা বিশ্বাস করেন তার সঙ্গে শিশু যিশুর সাক্ষাৎ ঘটেছিল। এর মধ্য দিয়ে সাধু আন্তনী অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করেন। তার অনুসারীদের মতে, সাধু আন্তনীর নাম মুখে নিলে অন্তরে ভক্তিভাবের জন্ম নেয় এবং হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার জন্য সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা করলে সুফল পাওয়া যায়। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ক্ষণজন্মা এ মহাপুরুষ ইহলোক ত্যাগ করেন।
তাই প্রতি বছর কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোরা গ্রামের সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবে প্রচুর সংখ্যক খ্রিস্টভক্ত উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে দখিনা হালকা বাতাস ও শীত উপেক্ষা করে দুই খ্রিস্টজাগে তীর্থযাত্রীরা আসতে শুরু করে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় নাগরী ধর্মপল্লী পালকীয় পরিষদ প্রাঙ্গণ। এতে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা ছিল পুরো পালকীয় পরিষদ প্রাঙ্গণ।
তীর্থোৎসবটি শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের হলেও উৎসবে অংশ নেয় দেশ-বিদেশ থেকে আশা ভিন্ন ধর্মের শিশু কিশোর ও নর-নারীসহ লাখোও মানুষ। সকালে দুটি পর্বের তীর্থোৎসবে আরতি আগমনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। আরতি শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শুরু হয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বাণী পাঠ ও উপদেশ।
খ্রিস্ট প্রসাদ বিতরণ শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী আশীর্বাদ জ্ঞাপন করেন ফাদার জয়ন্ত গমেজ। উভয় পর্বের তীর্থোৎসব প্রার্থনা পরিচালনা করেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন্ডি ক্রুশ। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পুরোহিত, ফাদার, ব্রাদার, সিস্টারসহ উপজেলার ৫টি মিশনের ফাদার, ব্রাদার ও সিস্টাররা।
Discussion about this post