ভরা বর্ষা মৌসুমেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। তবে সপ্তাহের শেষ দিকে এই গরম থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তর এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় একই প্রবণতা দেখা যেতে পারে। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত করে।
এ বছর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা বিভাগ এবং আশপাশের এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এরপর বজ্রঝড় ও বৃষ্টিতে কয়েক দিনের স্বস্তি মিললেও এপ্রিলের শেষভাগে সপ্তাহজুড়ে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলে।
গরমের ভরা মৌসুমে এবার রাজশাহীতে দুই দফা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল। এপ্রিলের ৩০ দিনের মধ্যে অন্তত ১১ দিন বিস্তীর্ণ এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান বলেন, তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভ এখন আবহাওয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ হ্যাজার্ড’ হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমেও তাপপ্রবাহ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একই জায়গায় একই প্যাটার্নে আর এটা থাকছে না। প্রতিবছর আমরা বদলাতে দেখছি। এই যেমন দুই বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের রাঙামাটি পর্যন্ত হিটওয়েভের আওতায় চলে আসছে। আগে এটা ছিল না। এখন মার্চ আর এপ্রিলে তাপপ্রবাহের ধরনে ভিন্নতা থাকছে। তাপমাত্রা তো ক্রমাগত বাড়ছে, হিটওয়েভপ্রবণ এলাকাও বাড়বে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, বুধবার সিলেটের তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আগামী দুদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি একটি লঘুচাপ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর প্রভাবে সিলেটসহ প্রায় সারাদেশে বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া।
রংপুর অফিস জানায়, তীব্র তাপদাহে পুড়ছে রংপুর বিভাগ। গত দু’সপ্তাহ ধরে অত্যধিক গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রংপুর বিভাগের সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রংপুরে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করেছিল। রংপুর আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার বলেন, রংপুর বিভাগে দু-একদিনে কোনো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত তাপদাহের কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষের। সেসঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত, যা বাড়াচ্ছে দুর্ভোগ। বুধবার এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ।
সূত্র: সমকাল
Discussion about this post