আটা-ময়দার দামও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বছরের ব্যবধানে আটার দাম ৪২ শতাংশ এবং ময়দার দাম বেড়ে গেছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। একারণে বেড়ে গেছে বেকারি পণ্যের দামও। একইসাথে বেড়েছে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও। যে কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে টানাপোড়েন চলছে। ভোক্তাদের অভিমত, দামের লাগাম টানতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারের উচিত ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে দেয়া।
টিসিবি’র তথ্যমতে, ১ বছরের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়ে গেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, এক বছর আগে প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছিল কেজি ৩২ টাকা থেকে ৩৪ টাকায়। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা থেকে ৪৮ টাকায়। এই সময়ে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশেরও বেশি। একই সময়ে খোলা ময়দার দাম ৩৫.৭১ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, প্যাকেটজাত ময়দার দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ৫২ টাকা থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কনজুমার এসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, আটা এবং ময়দা অনেকেই চাল তথা ভাতের বিকল্প হিসেবে খেয়ে থাকে। একারণে দেশে আটা-ময়দার চাহিদাও প্রচুর। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো সেই বিকল্প পণ্যটিরও দাম বেড়ে গেছে। আসলে ভোগ্যপণ্যের বাজারটি এখন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। এখানে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমত পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ক্রেতারা তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে একটি সহজ পথ খোলা আছে। তা হলো টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করা। অনেক আগে থেকেই ক্যাবের দাবি ছিল টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করা। সরকার অনেক দেরিতে এই কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে টিসিবি’র ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে মানুষের সারি প্রতিদিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমনকি মারামারি পর্যন্ত হচ্ছে। ট্রাকের সংখ্যা বাড়ালে বাজারে এর প্রভাব পড়তো।
তিনি জানান, আটা-ময়দার দাম বাড়ার কারণে পাউরুটি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্যের দামও বেড়েছে। শুলকবহর এলাকার বিভিন্ন দোকানে পাউরুটি সরবরাহকারী একাধিক বেকারির বিক্রয়কর্মীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতিটি পাউরুটির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে অধিকাংশ বিস্কুটের দামও।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে এখন ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকে গম আমদানি অনেকটা কমে গেছে। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গম আমদানি বেড়ে গেছে। ভারতেও গমের দাম এখন প্রতি টন ৩০০ ডলারের বেশি। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ায় আরো বেশি। তার সাথে রয়েছে পরিবহন খরচ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না কমলে দেশে এই পণ্যের দাম কমবে না।
Discussion about this post