করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং দুজন নারী। এ সময় নতুন করে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ জন। শনাক্তের হার ২৫.১১ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশের ১৩ জেলাকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩২ জেলাকে মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ছিল মাত্র এক জেলা এবং মধ্যম ঝুঁকিতে ছিল সাত জেলা। এই এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২২৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল শনাক্তদের নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জন। মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৭৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টার আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গেল বছরের ১২ আগস্ট। সেদিন ১০ হাজার ১২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শনাক্তের হার ছিল ২২.৪৫ শতাংশ। সেই দিন মৃত্যু হয়েছিল ২১৫ জনের। মৃত্যুর হার ছিল ১.৬৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ৮৫৫টি পরীক্ষাগারে ৩৭ হাজার ৫৭৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৩৭ হাজার ৮৩০টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৯টি। তবে সুখবর হলো- গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪৭৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ রোগী।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ওমিক্রন অধিক সংক্রমণশীল হলেও এতে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কম। তবে দেশে বর্তমানে ওমিক্রনের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণও বাড়ছে। এতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। প্রখ্যাত রোগতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, এখন আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেটি তিন সপ্তাহ আগের সংক্রমণের চিত্র। দেশে এখন ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ চলছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেল্টার সংক্রমণ। ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগী বাড়ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩২ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে, স্বল্প সময়ে গোটা দেশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে ১৩ জেলা। ঢাকা ছাড়াও অনেক জেলার বেশিরভাগ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ওমিক্রনে। যে ১৩ জেলাকে করোনার উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেগুলো হলো- ঢাকা, গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও পঞ্চগড়। মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা ৩২ জেলা হলো- সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও।
অথচ এক সপ্তাহ আগেও শুধু ঢাকা ও রাঙামাটি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অধিদপ্তর উল্লেখ করেছে, যেসব জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি সেগুলো উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। যেই জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে সেগুলো মাধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব জেলায় সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। গত ১০-১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণের তথ্যের ভিত্তিতে এই জেলাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ, মৃত্যু ১৮৫ শতাংশ
গত ১২-১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। একই সঙ্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ২৭ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। গত সাত দিনে ২ লাখ ৩ হাজার ১২২টি পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সাত দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে।
আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে রোগী বৃদ্ধির হার ২২৮ শতাংশ। হাসপাতালগুলোতে কোভিড ডেডিকেটেড যেসব শয্যা আছে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চার হাজার ৬৮৬টি শয্যার বিপরীতে ৩ হাজার ৭১০টি এখনো খালি রয়েছে। নতুন করে শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সে অনুপাতে বাড়েনি। আমাদের অক্সিজেন সংকট নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট মজুদ আছে। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই।
Discussion about this post