গত (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের পকেটে মৃত্যুর ২০ মিনিট আগে ছিল মাত্র ৪ টাকা। মায়ের কাছে আরও ৫ টাকা চাইলে তিনি ১০ টাকার একটা নোট হাতে দিয়েছিলেন। লাফিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল মাইনুদ্দিন। আধা ঘণ্টা পরই বাবা আবদুর রহমান যখন ঘরে এলেন, তখন তাঁর লুঙ্গি আর শার্টে ছোপ ছোপ রক্ত ছেলের শরীরের।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে দুর্জয় ছিল সবার বড়। তার বাবা আব্দুর রহমান চা দোকানি। আর ভাই মনির হোসেন ভাড়ায় গাড়ি চালান।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে দুর্জয়ের মরদেহ নিয়ে সরাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তার স্বজনরা। মরদেহ এসে পৌঁছার পর বাদ এশা জানাজা শেষে স্থানীয় বিকাল বাজারস্থ শাহী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
নিহত প্রাণচঞ্চল উচ্ছল মাইনুদ্দিন মৃত্যুর মাত্র কয়েক মাস আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছিল, ‘ঠিক ততটা আঁধারে হারিয়ে যাব, যতটা অন্ধকারে হারালে কেউ সন্ধান পাবে না।’ রাশেদা বেগম ছেলের কান টেনে ধরে জানতে চেয়েছিলেন, এসবের অর্থ কী? প্রাণখোলা হাসি দিয়ে ও জানিয়েছিল, মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা।
এদিকে দুর্জয়ের মৃত্যুতে তার নানাবাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। একমাত্র দেবরের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভাবি শারমিন আক্তার। আর খালা আফিয়া বেগমও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মরদেহের অপেক্ষায় বাড়ির সামনে সড়কে অবস্থান করছেন দুর্জয়ের স্বজনরা। দুর্জয়ের মরদেহ দেখতে এক এক করে জড়ো হচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনরা।
দুর্জয়ের বড়খালা আফিয়া বেগম জানান, ওর খালাতো বোন আমোদা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। পরীক্ষা শেষে বোনের বিজয়ে আনন্দ করতে আজ নানাবাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু সব আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।
দুর্জয়ের ভাবি শিরিন আক্তার বলেন, আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকে নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকত দুর্জয়। আর কেউ আমার বাচ্চার সঙ্গে খেলবে না। আমাকে ডাকাডাকি করবে না। এসব ভাবতেই আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকার রামপুরা এলাকায় গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় দুর্জয় নিহত হয়। সে রামপুরার একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল।
Discussion about this post