মুনমুন মতিন,ক্যাম্পাস প্রতিনিধি,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।
লকডাউনে মনের যত্ন-
লকডাউনের এই দুর্দিনে কিভাবে আমরা নিজেদের যত্ন নিচ্ছি?
শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মনের যত্নেরও প্রয়োজনীয়তা কম নয়। শরীরে অসুখ হলে তা সারানোর জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেও মনের যে অসুখ হতে পারে তা আমরা যেন মেনেই নিতে চাই না। উল্টো সচেতনভাবে এড়িয়ে যাই।
যেহেতু মানসিক রোগগুলো আমাদের শরীরিক রোগগুলোর মতোই স্বাভাবিক, মানসিক স্বাস্থ্য বা মনের যত্ন নেয়া তাই একান্ত প্রয়োজন।
শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী হলো কোভিড-১৯। এই ভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে পুরো বিশ্বকেই থমকে দিয়েছে। মানুষ বাধ্য হয়েছে লকডাউনে যেতে। এই সময় নিজেদেরকে নিয়ে আমরা যতটা না সচেতন তার থেকে বেশি আতঙ্কিত। এর পিছনে মুখ্য কারণ হিসেবে কাজ করে অসত্য বা ভুয়া তথ্যে বিশ্বাস।
লকডাউন নামক এই কঠিন সময়ে উন্নত বিশ্বগুলো যেখানে তাদের সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে সময়ের যথার্থ ব্যবহার করছে সেখানে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা অনলাইনে অযথা সময় নষ্ট করছি।
সারাদিন ফেসবুক স্ক্রল অার নটিফিকেশন ঘাটতেই সকল ব্যস্ততা, ফলে বরাবরের মতো পরিবারের সদস্যদের কিছুটা সময় দিচ্ছি কি? উওরটা নিঃসন্দেহে ‘না’।
যার ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে মানসিক দুরত্ব; বৃদ্ধি পাচ্ছে পারিবারিক কলহ ও অশান্তি। নিয়মমাফিক সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে সম্পর্কের মাঝে অচেনা এক দেয়ালের সৃষ্টি হচ্ছে।
সর্বোপরি, এই সবকিছুই আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারন।
উদাহরণসরুপ, কেউ কেউ বিষণ্ণতায় ভুগছে এমনকি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
এছাড়াও যে ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি- একাকীত্ব অনুভব বা নিঃসঙ্গতা, অনিদ্রা, হতাশা, ক্ষুধামন্দা, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, কাজে আগ্রহ বা মনোযোগ কমে যাওয়া প্রভৃতি।
এই ধরণের মানসিক সমস্যা এক বা একাধিক আপনাকে গ্রাস করতে পারে। যার ফলাফল ভয়াবহ। ঠিক তখনই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। ‘সময় গেলে সাধন হবে না’। আসুন সময় থাকতে সচেতন হই এবং জেনে রাখি কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। এতে করে ধর্মীয় কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের শরীরচর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিভিন্ন অনলাইন প্রতিযোগীতা ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন।সৃজনশীল যে কোন কাজই ঘরে বসে করা যায়।
পরিবারের সদস্যদের সময় দিন। এতে করে সম্পর্ক যেমন ভালো হবে তেমনিভাবে পারিবারিক অশান্তিও দুর হবে।
নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করুন। যেমন-গান,আবৃত্তি,চিত্রাঙ্কন,রান্নাসহ ঘরের যে কোন কাজ করতে পারেন।
অনিদ্রা যেমন ক্ষতিকর তেমনিভাবে অতিরিক্ত ঘুমও শরীরের জন্য খারাপ। তাই পর্যাপ্ত (৭-৮) ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
সকালে বিকালে বাড়ির ছাঁদে যেতে পারেন এতে শরীর ও মন ফুরফুরে থাকবে।
নিয়মিত যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করুন। প্রয়োজনে অনলাইনের সাহায্য নিন।
ভবিষ্যৎ সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শান্ত মনে প্রস্তুতি নিন। গঠনমুলক কাজে মানসিক প্রশান্তি পাবেন।
এছাড়াও অনলাইনে শিক্ষামূলক ভিডিও দেখুন, মন খারাপ থাকলে বন্ধুদের সাথে গল্প করুন। সর্বোপরি নিজের ভালোলাগা বুঝতে শিখুন এবং সময়কে যথাযথ গুরুত্ব দিন।
এভাবে আপনি মানসিক স্বাস্থ্য বা মনের যত্ন নিতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন সুন্দর মনের অধিকারী হবেন, অন্যদিকে সুখী জীবনযাপন করতে পারবেন। আসুন ঘরে থাকি, নিরাপদ থাকি। করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হই।
শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মনের যত্ন নেই। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মানবিকতার চর্চা করি। ভালো থাকি, ভালো রাখি। ধন্যবাদ।
মুনমুন মতিন,
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।