একজন মারা যাওয়ার আগেই কভিড-১৯ তাকে মেরে ফেলে! সত্যিই কী তাই। আমি যখন হাতে প্রথম আমার কভিড-১৯ পজিটিভের রিপোর্ট পাই, সে সময় নিজেকে নিজে স্পর্শ করে আগে নিশ্চিত হয়ে নেই- সত্যিই কী আমি
বেঁচে আছি? দ্বিতীয় পরীক্ষার পর কভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট হাতে আসার পর আমার রক্ত হিম হয়ে যেন জমে যায়। অন্যদের অনুভূতি কেমন ছিলো আমার জানা নেই, কিন্তু কভিড-১৯ আমার মধ্যে তৈরি করে এক ‘মৃত্যু ভয়’। এ এক ভয়াবহ হতাশা।
করোনার মত এমন একটি অজানা ভাইরাস নিজের শরীরে নিয়ে আছি এটা কতটা ভয়ের তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আমার অনেক বন্ধু ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত এবং হংকং থেকে কভিড-১৯ আক্রান্ত থাকাকালে আমার অভিজ্ঞতার লেখা পড়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং আমার আরোগ্য কামনা করেছেন।
স্থানীয় সকল আত্মীয় এবং বন্ধুরাও আমার সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেছেন। আমি তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ (২ জুন) আমি কভিড-১৯ মুক্ত। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। ফলে আমি সিএমএইচ ছেড়ে যাচ্ছি।
আমার আগে যারা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে এমন অনেককে এখনো হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসায়। অনেকে এখনো তীব্র যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে করোনার সঙ্গে।
এটি সত্যিই কষ্টকর। পুরোপুরি বিষয়টা বোঝাবার মতো কোন ভাষা আমার জানা নেই। আগামী আরো ১০ দিন আমাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আমার ড্রাইভার বিশ্বাস করেনি যে আমার শেষ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, আর সে কারণেই বাসায় যেতে হাসপাতালে গাড়ি নিয়ে আসতে হয়েছে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে।
কিন্তু কিভাবে কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করলাম? আমার আত্মবিশ্বাসের প্রথম স্থান ছিলো সিএমএইচ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে প্রথমসারিতে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া সকলকে স্যালুট জানাই।
এখানকার প্রায় সকল ডাক্তার এবং নার্সদের বাড়তি সময় খাটতে হয়েছে এই করোনা রোগীদের নিয়ে। তারা এখানে ৭৫০ জনের বেশি রোগীকে হাসিমুখে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় করোনার চিকিৎসা দেয়া অধিকাংশ হাসপাতালই একত্রে এত সংখ্যক করোনা রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে বলে মনে হয় না।
এই সিএমএইচ সরাসরি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এখানের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে তিনি খোঁজ রাখে যা শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের কল্যাণে মেডিকেল সেবার গুরুত্ব কী তা প্রচণ্ডভাবে অনুভব করেন বাংলাদেশের সেনা প্রধান।
তার পরিকল্পনা, উষ্ণ আমন্ত্রণ, সহায়তা, দিক নির্দেশনা এবং যত্ন নেয়া সবই একজন করোনা রোগীকে তার সেই ভয়ের টানেল থেকে বেঁচে থাকার আলোর পথে নিয়ে আসে।
শুধু তাই নয়। প্রতিটি সেনা সদস্যের জন্য সেনা প্রধান জেনারেল আজিজের চিন্তা ভাবনা অন্য যে কারো থেকে আলাদা। বর্তমানে সেনা বাহিনী থেকে অবসর পাওয়া মানুষগুলো সেনা বাহিনীর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে যা পূর্বে কল্পনাও করা যেত না। অবসর নেয়া সহযোদ্ধাদের কল্যাণে সেনা প্রধানের বাড়িয়ে দেয়া এই হাত বর্তমানে কর্মরত সেনা সদস্যদের আরো উজ্জীবিত করছে।
আমি মনে করি দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতই সিএমএইচ হাসপাতালেও আরো কিছু ডাক্তার বিশেষ বিবেচনায় জরুরি নিয়োগ দেয়া উচিত। এখানে ডাক্তার ও নার্সরা হাসিমুখে সেবা দিয়ে গেলেও তারা অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করছে। তাদের বিশ্রাম কম হচ্ছে। সেই সঙ্গে নির্ধারিত পর্যাপ্ত সময় তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারছে না।
এ সময় কার্ডিওলজি বিভাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ডাক্তারদেরও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে।
আমি জানি আপনারা কেউ প্রশংসা পেতে কাজ করছেন না। কিন্তু আপনাদের প্রশংসা না করে পারছি না।
বিশেষত সেনা প্রধান এবং সিএমএইচ হাসপাতালে থাকা তার দুর্দান্ত দলের সদস্য কমান্ডেন্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তৌহিদ এইচ সিদ্দিক, চীফ ফিজিশিয়ান বিগ্রেডিয়ার আসিফ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা শহীদ, কর্নেল নাজমা, ল্যাফটেন্যান্ট কর্নেল তানিয়া, মেজর রোমেল, মেজর সাবিকুন, মেজর শারফিনসহ সকলকে।