লুটপাটের অপর ঘটনায় পটেটো ফ্লাক্স বিডি নামের প্রতিষ্ঠান পটেটো ফ্লাক্স উৎপাদনের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু পরে আইসিবির টিম পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়, সে কারখানায় পটেটো ফ্লাক্স উৎপাদন হচ্ছে না। অন্য একটি কোম্পানি বিস্কুট কারখানা দিয়েছে। আবার পাটোয়ারি পটেটো ফ্লাক্সকে পটেটো ফ্লাক্স বানাতে ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু সেই কারখানাও বন্ধ পায় আইসিবির পরিদর্শন টিম। এই তিনটি ঘটনায় মাধ্যমে ইইএফ থেকে সোয়া ১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই পাটোয়ারি পটেটো ফ্লাক্স অন্য একটি স্থানে ৬ একর জমি ১২ লাখ টাকায় কিনে ক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ওই জমি দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকা মালিক আব্দুল আওয়াল পাটোয়ারি ও শাহ আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়।
লুটপাটের ঘটনায় আরও দেখা যায়, জমির মিউটেশন জাল বানিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাতক্ষীরার হ্যাচারি সিটি অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স। এই প্রকল্পের প্রকৃত সত্য গোপন করে ঋণ পাইয়ে দিতে সরেজমিনে পরিদর্শনের মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু এক কর্মকর্তা। এখন প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় টাকা আদায় অনিশ্চিত।
এছাড়া আইসিবির প্যাড, সিল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে জুপিটার আইটি লি. অস্তিত্বহীন প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। উদ্যোক্তাকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের খুঁজে না পাওয়া ও অস্তিত্বহীন প্রকল্পের তালিকায় আরও আছে গানকি লি. এবং ইনসার্ট সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস লি.। এ দুই প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের অর্থ অনত্র স্থানান্তর করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, হোসাইন হ্যাচারি অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স, সালমান ফিশারিজ, প্রেজান্টার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, কোয়ালিটি এ্যাকুয়া কালচার, বলেশ্বর হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ লিমিটেড, অঞ্চল অ্যাগ্রো প্রসেসিং, আইজেন সফটওয়্যার লিমিটেড, রিসোর্সেস টেকনোলজি, আল সরদারনী ফুড লিমিটেড বন্ধ আছে। এ ধরনের আরও ৫৯ প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এসব প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা।
সিএজি প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ জালিয়াতি করেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-নোয়াখালী অ্যান্ড ফুড লিমিটেড ৫২ কোটি, দ্যা ডিকোড ৯ কোটি, কোয়ালিটি মিল্ক প্রোডাক্ট প্রায় ৯ কোটি, রিয়ার অ্যাগ্রো প্রিজার্ভিং সাড়ে ৪ কোটি, ইরিনা অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও গ্রিন গোল্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট ১৩ কোটি, সূর্যনগর ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স ও সূর্যভিটা অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স প্রায় ১০ কোটি, ছোঁয়া অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড সাড়ে ৪ কোটি, কোয়ালিটি অ্যাগ্রো ফরেস্ট লিমিটেড ১৭ কোটি, লালমনিরহাটে ফিশারিজ, হ্যাচারি অ্যান্ড ফিড লিমিটেড প্রায় ৬ কোটি, গ্রাম বাংলা এনপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড অ্যাগ্রো লি. ৩ কোটি ৩০ লাখ, রয়েস অ্যাগ্রো ফার্মস লি. সাড়ে ৫ কোটি এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি ম্যাট্রিক্স বাংলাদেশ লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইনফরমেটিক্স লিমিটেড, আলফা সফট সিস্টেমস লিমিটেড ও ইলেকট্রনিক ডিজিটাল সিস্টেমস লিমিটেড পৌনে ২ কোটি টাকা।
এছাড়া তালিকায় আরও আছে-ফরচুন পোলট্রি হ্যাচারি আড়াই কোটি, ইফাডাফ ইকুয়া লি. সাড়ে ৩ কোটি, সীনহা গ্রীনারী অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স লি. ডিএনএ স্টার্টকম লি. ৩ কোটি টাকা, হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো প্রসেসিং ৪ কোটি টাকা, সপ্তডিংগা পোলট্রি হ্যাচারি সোয়া ২ কোটি টাকা, স্টার মিল্ক প্রডাক্ট দেড় কোটি, প্রিমিয়াম সিড ১ কোটি, মামুননগর মাল্টিপারপাস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম ১ কোটি, অর্মি মর্ডান প্রণ হ্যাচারি ১ কোটি, ফেরদৌস বায়োটেক (প্রা.) ২ কোটি, নাজমুল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ২ কোটি, তানজিন অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স এক কোটি, মারফি ম্যাককান কনসালটিং ৮০ লাখ এবং ড্রিমস সফট লি. ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সিএজি প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার আগে উদ্যোক্তার ৫১ শতাংশ টাকা আগেই বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি ৪৯ শতাংশ অর্থ ইইএফ থেকে দেওয়ার কথা। এই টাকা ঋণ নেওয়ার ৮ বছরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেরত পায়নি। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে, সঠিকভাবে মনিটরিং করা হয়নি। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইসিবির ইইএফ ইউনিটের কতিপয় কর্মকর্তা মিথ্যা, ভুল প্রতিবেদন দিয়ে ঋণ পেতে সহায়তা করেছে। ওইসব উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ঋণ ইস্যু, মনিটরিং এবং যার গাফিলতিতে এই অর্থ বেরিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
সূত্র : যুগান্তর