চন্দনাইশের কাঞ্চন নগরের লাল পেয়ারা সুসাধু মিষ্টি বেশি:দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও জনপ্রিয় ফল

দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধিঃ২৯আগস্ট

চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় পেয়ারাকে বলা হয় গয়াম। দেশ ছাড়া ও বিদেশে বেশ বিখ্যাত দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের কাঞ্চন নগরের পেয়ারা।বেশ সুসাধু মিষ্টি বেশি, বিচির সংখ্যা তুলনামূলক কম। পাকলে ভেতরে কোনোটি সাদা, কোনোটি হলুদ, কোনোটি লালচে।

প্রতিটি মৌসুমেই বারি, বাউ, ইপসা, কাজী ও কাঞ্চনসহ ১৩ জাতের ছোট-বড়, সবুজ, আধা-পাকা পেয়ারার ফলন হয়। বংশ পরম্পরায় পেয়ারা চাষ ও বিক্রিতে নিয়োজিত এ অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত এ পেয়ারা বেপারিদের হাত ঘুরে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

এছাড়া, দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। চন্দনাইশের পেয়ারা চাষে ব্যবহার করতে হয় না কোন ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ। শুধুমাত্র বছরে একবার গাছের ডাল পালা ছেঁটে দিয়েই বাগানের দায়িত্ব শেষ করতে হয়।

সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসে গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র মাস পর্যন্ত বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করা হয়। চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা সর্বোচ্চ ওজনে ১ কেজি ও সর্বনিম্ন ২৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই এ পেয়ারা স্বাদে সুমিষ্ট, ঘ্রাণে মোহনীয় এবং দেখতে খুব সুন্দর।

একেকটি গাছ থেকে ৫শ থেকে ৭শ পেয়ারা পাওয়া যায়। প্রতি মৌসুমে দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বাগানে উৎপাদিত হয় ২০/৩০ কোটি টাকার পেয়ারা। ভোরেই বাগানগুলো হয়ে ওঠে সরব। পেয়ারা সংগ্রহে নেমে পড়েন শ্রমিকরা। ভোরের আলো না ফুটতেই পাহাড় থেকে দল বেঁধে পেয়ারা নিয়ে বাজারে ফিরছেন চাষিরা।

লাল কাপড়ে মোড়ানো পুঁটলি বেঁধে আনা হচ্ছে তিন থেকে চার মাইল পায়ে হেঁটে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন রৌশনহাট, বাদামতল, বাগিচাহাট, খানহাট রেল স্টেশন, পটিয়ার কমল মুন্সির হাট, খরনা সহ বিভিন্ন এলাকার হাট ও খোলা জায়গায় বিক্রি হয় চন্দনাইশের পেয়ারা।

তবে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা বেচাকেনা হয় চন্দনাইশ উপজেলার রৌশন হাটে। পেয়ারা বাগানের মালিক আবদুল মজিদ শাহ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পেয়ারা চার ভাগের এক ভাগ ফলন হয়েছে। বাগানের খাজনা পরিশোধ করে লাভের মুখ দেখা কঠিন হবে।

তবে পেয়ারার দাম ভাল থাকায় হয়তো ক্ষতি পোশানো সম্ভব হতে পারে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় পেয়ারার ফলন ভাল হয়নি। চাষিরা সময়মত পরিচর্যা করেও আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় পেয়ারার দাম গত বছরের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ বেশি।

গত বছর মৌসুমে ছয় থেকে সাত শত টাকায় পেয়ারার ভার পাওয়া যেত। ফলন ভাল না হওয়ায় পর্যাপ্ত পেয়ারা আসছে না বাজারে। তাই শুরু থেকে ২০০০/২৫০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ারার ভার বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বাহির থেকে আসা বেপারিরা তাদের চাহিদা মত পেয়ারা নিতে পারছে না। চন্দনাইশের পেয়ারা উৎপাদনের ফলে বদলে গেছে হাজার পরিবারের ভাগ্য।

জনশ্রুতি রয়েছে ১৮৫০ সালের দিকে পটিয়ার কচুয়াই চা-বাগানের মালিক হেগিন্স লন্ডন থেকে প্রথমে আনারস, পরে পেয়ারা ও লিচু বীজ এনে তার বাংলোর আশপাশে রোপণ করেন। পরে এ বীজ থেকে চারদিকে বাগান ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে, পটিয়ার পাহাড়ি এলাকার হাইদগাঁও, কচুয়াই, খরনা, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর থেকে দোহাজারী এলাকা পর্যন্ত কাঞ্চননগর, হাসিমপুর ও জামিজুরীর পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ২ হাজার একর এলাকা জুড়ে পেয়ারার চাষ হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেছেন, মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে পেয়ারার ফলন আশানুরূপ হয়নি। পরবর্তীতে অবিরাম বৃষ্টির ফলে আবারও ফলনের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি আউশ ধানও যথাসময়ে রোপণ করতে পারেনি কৃষকেরা। এক কথাই দেরিতে আউশ ধান রোপণ করার কারণে আমন ধানে প্রভাব পড়বে।

ছবিওতথ্য–সংগৃহিত২৯/০৮/২১ইং(অনলাইন)

 

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ