গোয়েন্দা জেরায় গোপন তথ্য ফাঁস করেছে বিউটি

ঢাকার অভিজাতপাড়ার নামিদামি এক শ্রেণির মডেল, বিমানবালা ও দালালদের সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন বিউটি। গোয়েন্দা জেরায় তিনজন বিমানবালার হাঁড়িভাঙ্গা তথ্যও দিয়েছেন। দুইজন সরকারি দলের নেতার পরিবারে বসবাস করছেন। আরেকজন পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপরজন অভিযানের পরও গুলশান ও ধানমন্ডিতে সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছেন।

সম্প্রতি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) টোপ গিলে গ্রেফতার হন বিউটি। তিনি গুলশান ও বনানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কলগার্ল সরবরাহ করেন। এ ব্যবসায় বিউটি অনেক পুরনো মুখ। তার রয়েছে নানা পর্যায়ের ক্লায়েন্ট। তাদের আবার রয়েছে নানা ধরণের চাহিদাও। কেউ চান মডেল, কেউ কর্পোরেট গার্ল আবার কারো বা পছন্দের তালিকায় আছে বিমানবালা। সবার চাহিদার বিষয়টি পুঁজি করে বিউটি এই অন্ধকার জগতে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল সাম্রাজ্য। যেখানে সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

জানা গেছে, গ্রেফতার বিউটি যাদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন তাদের সবার ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য নিচ্ছেন। এমনকি ঢাকার গুলশান বনানী ও ধানমন্ডি এলাকায় বিউটির যে সিন্ডিকেট রয়েছে সেই সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের ডিভাইস থেকে অসংখ্য ছবি ও রেটকার্ড পাওয়া গেছে। মিলেছে অনলাইনে বিভিন্নগ্রুপে মডেল, বিমানবালা ও তথাকথিত নায়িকাদের একাধিক ছবি ও ভিডিও।

গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, বিউটির সঙ্গে যাদের যোগাযোগ তাদের অনেকে ভালো পরিবার থেকে এসেছেন। কারো আবার ভালো পরিবারে বিয়েও হয়েছে। আবার অনেকে এক সময় চাকরি করতেন এখন সেই চাকরির পরিচয় ধরেই এ অপকর্মে জড়িত আছেন।

সাবিনা ও বিউটিসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর ঢাকার এই অন্ধকার জগতের অনেকে এখন আত্নগোপনে গেছেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর গোয়েন্দারা বন্ধ পেলেও হিটলিষ্টে থাকা অন্তত ৩০ জনের বাসা-বাড়ি এবং তাদের পারিবারিক সব তথ্য গোয়েন্দা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই তালিকায় আছে সরকারদলীয় নেতার পরিবারের দুই সদস্য। তারা নিজেও মেয়ে সরবরাহকারী। ক্লায়েন্টদের কাছে অ‍্যাপসের মাধ্যমে দেন-দরবারের পর মেয়ে সরবরাহ করে থাকেন। গোয়েন্দারা নয়ন নামে একব্যক্তির ডিভাইস পর্যালোচনা করে বেশ কয়েকজন মডেল ও বিমানবালার তথ্য পেয়েছেন।

আরও জানা গেছে, যে কোনো সময় এই অন্ধকার জগতের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে বিবাহ এবং বিয়ের নামে প্রতারণা করার তথ্য পাওয়া যায়। দুইজনকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা। তারা যতই কৌশল করুক না কেন গোয়েন্দা কৌশলের কাছে তাদের ধরা পড়তে হবে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হানিমুন নামের টেলিগ্রামের একটি পেজের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

এই পেজের সব তথ্য পাওয়া গেছে নয়ন নামে একব্যক্তির কাছ থেকে তিনি নিজেও মেয়ে সরবরাহ করে থাকেন। তার সঙ্গে দুইজন বিমানবালা ও তিনজন মডেলের ভালো সম্পর্ক বলে জানা যায়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সালমান, জাহিদ, রাসেল, বেবি, রানুসহ কয়েকজনের কল রেকর্ড থেকে পুরনো কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এবং তদন্তের স্বার্থে এসব বিষয় নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতারনার শিকার হয়েছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে তারা যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। যা সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য যথেষ্ট।

গুলশান এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এক সময় বিমানবালা ছিল এখন নেই এমন কয়েকজন পুরনো পরিচয় ও পোশাক ব্যবহার করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নতুন এয়ালাইন্সে চাকরির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন বলেও খোঁজ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, এই অন্ধকার জগতে মডেল ও বিমানবালাদের বেশ কদর রয়েছে। তাই মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের ব্যবসার জন্য কয়েকজনকে চাকরিতে যোগ দিতে উদ্ধুদ্ধ করেন। এতে করে তাদের চাহিদা ও ডিমান্ড বৃদ্ধি হবে বলে তারা মনে করেন। এয়ারলাইন্সে এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক আছেন বলে গোয়েন্দা সুত্রে জানা গেছে।

 

বার্তা প্রেরক

মামুন খান

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ