বিপিসি ও এসএওসিএল এর বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের অব্যস্থাপনায় দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত অডিট আপত্তি ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনিহা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন

আজকের সত্য সংবাদ ডেক্সঃ নিউজ, বিপিসি ও এসএওসিএল এর বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের অব্যস্থাপনায় দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত অডিট আপত্তি ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনিহা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন

বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিঃ এর অডিট আপত্তি ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে এসএওসিএল বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ। অষ্টম শ্রেণী পাশ, অথচ তিনি এখন স্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানীর সিনিয়র কর্মকর্তা। আরেক ব্যাক্তি চাকুরী পেয়েছেন কম্পানীর সাবেক মহা ব্যবস্থাপকের (জিএম সাহেব) বয়স নেই তাতে কী? আত্মীয় তো আছে। আত্মীয়করণে ঢুকে গেছেন কোম্পানির বড় পদে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রনালয়ের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০০৪ সালে চাকুরী হারানো ব্যক্তিকে জামাই আদরে ডেকে এনে আবারও চাকুরি দেয়া হয়েছে। অসম্ভব মনে হলেও তা—ই ঘটেছে রাষ্ট্রীয় অংশীদারি এই প্রতিষ্ঠানে। এসএওসিএলের এমন ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে বাণিজ্যিক অডিটে অভিযোগ ওঠার চার বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম, কর্পোরেশনের (বিপিসি) উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের অবহেলা ও যোগসাজশে এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন অনিয়মে নিয়োগ পাওয়া ওই ১৪ কর্মকর্তা। তাৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মো. শাহেদ এবং পরিচালক মো. মাঈনুদ্দিন এর প্রভাবে ২০১২ সালের পর থেকে প্রায় সাত বছর নিরীক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারেনি সরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অডিট অধিদপ্তর। তবে শাহেদের মৃত্যুর পর এসএওসিএলের ২০১৩—১৪ থেকে ২০১৮—২০ অর্থবছর পর্যন্ত এবং ২০১২—১৩ অর্থবছরের অংশ বিশেষের ওপর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০২০ সালের ২৯ অক্টবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে নিরীক্ষা কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেন নিরীক্ষা দলের প্রধান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ ও অর্থ কর্মকর্তা।

বাণিজ্যিক ওই অডিটে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ইচ্ছামতো সরাসরি আবেদনের মাধ্যমে ১৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ার গুরুতর অনিয়ম পাওয়া যায়। যাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তারা হলেন— সিনিয়র অফিসার অষ্টম শ্রেণী পাশ (মেইনটেনেন্স) মো. শহিদুল ইসলাম, জুনিয়র অফিসার (টেকনিক্যাল) দুর্জয় দে, অফিসার (হিসাব) মো. ফখরুল ইসলাম ভুঁইয়া, টেকনিক্যাল অফিসার মো. আনোয়ার জাহিদ, সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) প্রলয় চক্রবর্তী, জুনিয়র সেলস অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন, উপ—ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল ও অপারেশন) মো. মোকাররম হোসেন, উপ—ব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. মাহমুদুল হক তুষার, জুনিয়র অফিসার (অপারেশন) মো. শামীম সহিদ, টেকনিক্যাল অফিসার মো. আনিসুর রহমান, অফিসার (এইচআর) আবদুল্লাহ আল মামুন, অফিসার (সেলস) মীর হোসেন, ম্যানেজার (প্রোডাকশন ও অপারেশন) মো. ছিদ্দিকুর রহমান ও অফিস সহকারী মো. আশরাফ উদ্দিন।

সিনিয়র অফিসার শহিদুল ইসলামের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। নিয়োগের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছরের বেশি। এক্ষেত্রে অস্থায়ী নিয়োগের শর্তভঙ্গ করা হয়েছে বলে আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। টেকনিক্যাল অফিসার আনোয়ার জাহিদকে শুধু আবেদনের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া কমিটির সুপারিশ ছাড়া কেবল আবেদনের ভিত্তিতে ম্যানেজারের সুপারিশে পদোন্নতিও দেয়া হয়। পাশাপাশি মেডিকেল রিপোর্টে কোলেস্টেরল, এলডিএল, এইচডিএল ও টিজি রেফারেন্স ভ্যালু অপেক্ষা কমবেশি ছিল বলে অডিট আপত্তিতে ওঠে আসে। অন্যদিকে মোকাররম হোসেনকে আবেদনের ভিত্তিতে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি উপ—ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল ও অপারেটশন) পদে নিয়োগ দেয়া হয়। মোকাররম এর প্রয়াত মহা ব্যবস্থাপক সাহেদের ভাগ্নে বলে আপত্তিতে জানানো হয়। একই কায়দায় নিয়োগ পান উপ—ব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. মাহমুদুল হক তুষার। যার নিয়োগেও ছিল না পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট। চাকরি স্থায়ীকরণের এক বছর পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। পদোন্নতি কমিটি পঠন ছাড়াই সিনিয়র অফিসার থেকে সহকারী ব্যবস্থাপক ও উপ—ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

বিধিতে চার বছর পর পদোন্নতি দেয়ার বিধান থাকলেও দুই বছরেই এসব পদোন্নতি দেয়া হয় বলে আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। এই মাহমুদুল হক তুষার তৎকালীন জিএম শাহেদের আপন খালাতো ভাই। টেকনিক্যাল অফিসার আনিসুর রহমানকে একই কায়দায় সরাসরি এম—৭ গ্রেডে নিয়োগ দেয়া হয়। অফিসার (এইচআর) আবদুল্লাহ আল মামুনকে পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি এম—৭ গ্রেডে নিয়োগ দেয়া হয়। অফিসার (সেলস) মির হোসেন ও নিয়োগ পান সরাসরি। তিনি মহাব্যবস্থাপক শায়েদের শ্যালক হিসেবে জনশ্রুতি আছে বলে আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। অফিস সহকারী আশরাফ উদ্দীনকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে পরীক্ষা ছাড়া। তাকে অপারেটর পদ থেকে অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। তিনি মহাব্যবস্থাপক শাহেদের চাচাতো ভাই বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয়েছে ম্যানেজার (প্রোডাকশন অ্যান্ড অপারেশন) মো. সিদ্দিকুর রহমানের নিয়োগে।

শুধু আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি উপ—ব্যবস্থাপক হিসেবে এম—৪ গ্রেডে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। ২০০৪ সালেও তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করেছিলেন। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তাকে আবারও আবেদনের ভিত্তিতে দেয়া হয় বলে আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। তিনি প্রথমে ২০০০ সালে এসএওসিএলে যোগ দেন। পরে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২০০৪ সালে চাকরিচ্যুত হন। ২০১৫ সালে আবারও সরাসরি নিয়োগ পান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন সিদ্দিকুর রহমান।

নিয়োগে অনিয়মের পাশাপাশি কর্মকালীন সময়েও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন এসব কার্মকর্তা। অনুমোদনহীনভাবে ৫০ কোটি টাকার এফডিআর ভাঙিয়ে ৬৪ লাখ টাকা তছরূপ, বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই এসএসসি পাস না করা লোককে সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ, এসএওসিএলে মেশিন আমদানির নামে বিদেশ সফর, অনুমোদনহীন গাড়ি ব্যবহার করে অর্থ অপচয়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এসব কার্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রাজ্ঞান সাভার গোডাউন ইনচার্জ থাকা কালীন সময়ে বাকিতে পণ্য বিক্রি দেখিয়ে পণ্য বিক্রির ৫৭,৫৮,৮১০ টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমান হিসাব বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন উক্ত পদে বহাল আছে, এই বিষয়ে গত ২৯/০৫/২০১৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যাক মঈনউদ্দিন আহমেদ সাক্ষরিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদেশ দেন।

পরবর্তিতে গত ০৫/০৮/২০১৯ সালে ম্যানেজার এডমিনিষ্ট্রেশন এন্ড কালেকশন মোঃ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত। উক্ত পণ্যের বিক্রিত টাকা এই পর্যন্ত কোম্পানীর হিসাবে যুক্ত হয় নাই। এই বিষয়ে কোম্পানীর কালেকশন ডিপার্টমেন্ট এবং রিকোভারী টিম লিখিত ও মৌখিক ভাবে জনান আলমগীর হোসেনকে অনেক বার অবগত করেন। আরও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় উক্ত পণ্য বিক্রির টাকায় তিনি সাভারে একটি জমি ক্রয় করেছেন এবং উক্ত জমিতে একটি টিনশেড বাড়ী তৈরি করেছেন। আলমগীর হোসেনের ফেলে যাওয়া গ্রাহকের কাছে বিপুল পাওনা টাকার, অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রয়োজনীও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। বর্তমানে উক্ত হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা হয়েও সেলস মার্কেটিং করার নামে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এখনো উক্ত পদে বহাল আছে। পাঁচ বছরেও ব্যবস্থা নেয়নি।

বিপিসি’র গত ১২ আগষ্ট ২০২৪ তারিখের অফিস আদেশকৃত। বিপিসির অধীনস্থ কোম্পানীসমূহের প্রধান স্থাপনা কে সকল কর্মকর্তা/ কর্মচারী বিগত ০৩ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কে আগামী ০২ মাসের মধ্যে অন্যত্র বদলী করতে হবে বলা হলেও এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে ২০ বছর ধরে একই পদে থাকা ব্যক্তি আব্দুস সালাম মীর ও হিসাব বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন সহ ১৪ কর্মকর্তা উক্ত পদে এখনো পর্যন্ত এসএওসিএল প্রধান কার্যালয়ে বহাল রয়েছে। সে সকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হলেও এখনো পর্যন্ত এসএওসিএল এর বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের নিরব ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ—আপত্তি থাকা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেইনি, প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মণি লাল দাস, ধামাচাপা দিয়েছেন সাবেক সিইও। চেয়েছিলেন দুর্নীতিবাজ সহ ১৪ জন অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রোমশনের দেওয়ার জন্য সাবেক সিইও মণি লাল দাশ। এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মীর ও আলমগীর হোসেনের হাতে জিম্মি।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ