প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের বিবেচনা করবে সরকার”

সরকার ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে ভি‌ডিও কনফারেন্সে এ কথা জানান তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ইতিমধ্যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এই কয় মাস সবকিছু বন্ধ দেখে তাদের ঋণের সুদ বেড়ে গেছে। সেটার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। কারণে এই সুদ এখনই নেয়ার কথা না। এছাড়া এই কনফারেন্সের পরেই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো।

 

তিনি বলেন, সুদগুলো যেন স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায়, এছাড়া কতটুকু আপনারা দিতে পারেন সেটা নিয়ে বিবেচনা করা হবে। তাই এটা নিয়ে আপনারা চিন্তা করবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে এক বিরাট সমস্যা করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে। সবাই ঘরবন্দি এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। উন্নত দেশ অনুন্নত দেশ সব দেশেই সমস্যা। এ ভাইরাস থেকে আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সকলেই যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্স সকলে প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে। দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই ঘরে থাকার অনুরোধ করার পর তারা ঘরে থাকার চেষ্টা করেছেন।

 

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য অধিদফতর আইইসিডিআর প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করেছে এবং যা হচ্ছে জানাচ্ছে।

 

করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিনিয়ত এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত একটি সংক্রামক ব্যাধি। দুশ্চিন্তার বিষয় এটা কখন কার হবে বোঝা যায় না। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে কাজ করছি। ৩৪৬৪ জন ডাক্তার অনলাইনের মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সহযোগিতা দিচ্ছি। তাদের ভালো-মন্দ দেখছি এবং তারাও যেন সুরক্ষিত থাকে যা যা প্রয়োজন সেটা দিয়ে যাচ্ছি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কাজ নেই। বিশেষ করে একেবারে নিম্ন আয়ের লোক, এমনকি ছোটখাটো কাজ করে যারা খায় তাদের কষ্ট আমরা জানি। ছোটখাটো ব্যবসা করা, কৃষিকাজ করে তাদের কথা চিন্তা-ভাবনা করে প্রণোদনা দিয়েছি। সেখান থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে। মাত্র ২ শতাংশ ইন্টারেস্টে আমরা এই টাকাটা দিচ্ছি। আর যারা ঋণ নিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে দিতে পারেননি তাদের এখনই সুদ পরিশোধ করতে হবে না। এনিয়ে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসব।

 

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সবচাইতে বড় কাজ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার পথ উন্মুক্ত রাখা। এ জন্য আস্তে আস্তে লকডাউন শিথিল করে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সবকিছু যাতে স্বাভাবিক হয়ে যায় সে দিকে নজর দিচ্ছি।

 

এসময় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বরের আগে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি যদি না বদলায় তাহলে সেপ্টেম্বরের আগে কোনো স্কুল-কলেজ খুলবে না। আগে করোনা বিদায় নেবে, তারপরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে।

 

এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনার ভি‌ডিও কনফারেন্স শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকা‌রি বাসভবন গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবি‌নিময় করছেন তিনি।

 

জেলাগুলো হলো- বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ।

 

ভি‌ডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বি‌ভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, পু‌লিশ বা‌হিনী, সি‌ভিল সার্জন, নার্স, রাজনৈ‌তিক ব‌্য‌ক্তি, সেনাসদস‌্য, মস‌জিদের ইমাম, শিক্ষকসহ বি‌ভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে করোনা প‌রি‌স্থি‌তি ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে মত‌বি‌নিময় করছেন।

 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ক‌রছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ‌্য স‌চিব ড. আহমদ কায়কাউস। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অনুষ্ঠান‌টি সরাসরি সম্প্রচার করছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চার দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৮টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

 

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংকট উত্তরণে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজেরও ঘোষণা দেন।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ